..............

ঠাকুর মহাশয় স্থিরভাবে স্তম্ভমূলে দন্ডায়মান।





ঠাকুর মহাশয় স্থিরভাবে স্তম্ভমূলে দন্ডায়মান



একবার সাউথ সুবার্বান স্কুলের শিক্ষক শ্রীযুক্ত অক্ষয় কুমার মজুমদার মহাশয় সৌভাগ্যক্রমে শ্রীশ্রী ঠাকুর মহাশয়ের পুরী গমনের সঙ্গী হইয়াছিলেন। ঠাকুরের সহিত পুরীধামে থাকা কালে একদিন অক্ষয়বাবুর আকাঙ্খা হয়, তিনি শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের সন্ধ্যারতি দর্শন করিবেন। অক্ষয়বাবু তাঁহার বাসনার কথা ঠাকুর মহাশয়ের কাছে নিবেদন করিলে ঠাকুর মহাশয় সম্মত হইয়া তাঁহাকে লইয়া সন্ধ্যার পূর্বে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের মন্দির দ্বারে পৌঁছিলেন। শ্রীমন্দিরের প্রধান ফটক সিংহদ্বার, যেখানে শ্রীঅরুণস্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত আছেন সেইখানে ঠাকুর মহাশয় দাঁড়াইয়া অক্ষয়বাবুকে আরতি দর্শন করিতে শ্রীমন্দিরে পাঠাইয়া দিলেন। তখন সন্ধ্যারতি আরম্ভ হইয়া গিয়াছে। কাঁসর ঘন্টা এবং নানাবিধ বাদ্য যন্ত্রের সগম্ভীর ধ্বনিতে মন্দির প্রাঙ্গনে গমগম করিতেছে। সুগন্ধি ধূপ, কর্পুর, চন্দন, অগুরু, ইত্যাদির সুগন্ধে চারিদিক আমোদিত। অক্ষয়বাবু আরতি দর্শন করিতে শ্রীমন্দির অভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। জগন্নাথ দেবের সন্ধ্যারতি তখন নানা উপাচারে প্রায় দুই তিন ঘন্টাব্যাপী চলিত। অক্ষয়বাবু শ্রীবিগ্রহ দর্শন ও প্রনাম করিয়া কিছুক্ষণ আরতি দর্শন করার পর, ঠাকুর মহাশয় মন্দির দ্বারে একাকী আছেন বিবেচনা করিয়া সিংহদ্বার অভিমুখে ফিরিয়া আসিলেন। অরুণ স্তম্ভের নিকট আসিয়া অক্ষয়বাবু দেখিতে পাইলেন, ঠাকুর মহাশয় স্থিরভাবে স্তম্ভমূলে দন্ডায়মান।
দীন মলিন বেশের এক বৃদ্ধা রমনী একটি থালায় ছোট ছোট কতগুলি প্রদীপ দ্বারা শ্রীশ্রী ঠাকুরকে আরতি করিতেছেন। শ্রীমন্দির অভ্যন্তর হইতে সন্ধ্যারতির শঙ্খ, ঘন্টার ধ্বনি ভাসিয়া আসিতেছে। সিংহদ্বার প্রান্তে অরুণ স্তম্ভের পাদদেশে একজন বৃদ্ধা প্রজ্বলিত প্রদীপে সজ্জিত থালাখানা দুই হস্তে দোলাইয়া নানা ভঙ্গিতে, নানা মুদ্রায়, তন্ময় অবস্থায় দন্ডায়মান শ্রীশ্রী রামঠাকুরকে আরতি করিয়া চলিয়াছেন। শ্রীশ্রী ঠাকুর পলকহীন শূন্য দৃষ্টিতে প্রস্তর মুর্ত্তিবত ধীর, স্থির ভাবে দন্ডায়মান। তিনি যেন ধ্যানস্থ এক বিগ্রহমুর্ত্তি। যতক্ষণ শ্রীমন্দিরে আরতি চলিতেছিল ততক্ষণ পর্য্যন্ত বৃদ্ধা সেই একই বস্তু প্রদীপ্ত দীপের থালা দোলাইয়া আরতি করিয়া গেলেন শ্রীশ্রী ঠাকুরকে। অক্ষয়বাবু একটু তফাতে থাকিয়া ওই আরতি দৃশ্য দর্শন করিতেছিলেন। তিনি নিকটে গেলেন না পাছে তাঁহার উপস্থিতিতে কোন ব্যাঘাত ঘটে।
বহু সময় ব্যাপী আরতি হইল। কিন্তু ছোট ছোট প্রদীপের শিখা সমানভাবে প্রদীপ্ত ছিল। একটি দীপও নির্ব্বাপিত হইবার কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ইহাও আশ্চর্য্য ঠেকিয়াছে অক্ষয়বাবুর।
যথা সময়ে শ্রীমন্দিরের সন্ধ্যা আরতি শেষ হইল। মলিন বেশধারিনী অজ্ঞাত সেই বৃদ্ধা রমনীও তাহার আরতি সমাপন করিয়া শ্রীশ্রী ঠাকুরকে প্রনাম করিয়া ভিড়ের মধ্যে অদৃশ্য হইয়া গেলেন। অক্ষয়বাবু বৃদ্ধাকে আর দেখিতে পাইলেন না। তিনি ঠাকুর মহাশয়ের সম্মুখে উপস্থিত হইলে দেখিলেন তিনি স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়াইয়া আছেন। কৌতূহলবশে অক্ষয়বাবু ঠাকুর মহাশয়কে বৃদ্ধার আরতি করার কথা জিজ্ঞাসা করিলে ঠাকুর বলিলেন যে ভিড়ের মধ্যে হয়তো কেহ মন্দির অভ্যন্তরে প্রবেশ করিতে না পারিয়া বাহিরে দাঁড়াইয়া শ্রীজগন্নাথ দেবকে আরতি করিয়াছেন। তাঁহাকে কেহ আরতি করেন নাই। অক্ষয় বাবু ঠাকুরের এই বাক্য মানিতে পারিলেন না। কারণ তিনি সমস্ত ঘটনা স্বচক্ষে স্পষ্টভাবে নিরীক্ষণ করিয়াছেন। ভুল হইবার কোন কারণ নাই। কিন্তু ঠাকুর মহাশয় ওই বিষয়ে কোনরূপ গুরুত্ব না দিয়া সম্পূর্ণ নির্ব্বাক থাকিয়া গৃহাভিমুখে রওনা হইলেন। অক্ষয়বাবু ঠাকুর মহাশয়কে অনুসরণ করিলেন।
ছন্নাবতার শ্রীশ্রী রামঠাকুর
শ্রী সদানন্দ চক্রবর্ত্তী
পৃষ্ঠা: ২৮৭
ঠাকুর মহাশয় স্থিরভাবে স্তম্ভমূলে দন্ডায়মান। ঠাকুর মহাশয় স্থিরভাবে স্তম্ভমূলে দন্ডায়মান। Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 09:03 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.