..............

১৩৫৬ বাংলার ১৮ই বৈশাখ ১৯৪৯ ইংরেজি ১মে অথবা অক্ষয় তৃতীয়া

১৩৫৬ বাংলার ১৮ই বৈশাখ ১৯৪৯ ইংরেজি ১মে অথবা অক্ষয় তৃতীয়া
১৩৫৬ বাংলার ১৮ই বৈশাখ ১৯৪৯ ইংরেজি ১মে অথবা অক্ষয় তৃতীয়া এই দিন-ক্ষন গুলি সব রাম ভক্তের মনে একটি বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। প্রচন্ড একটা হারানোর বেদনা হাহাকার হৃদয় আমাদের দুঃখ ভারাক্রান্ত করে। অশ্রুসজল হয়ে ওঠে আমাদের চক্ষুদ্বয়। দুপুর ১:৩০ মিনিট চৌমুহনীর একটি বাংলোতে আমরা আমাদের পরম আরাধ্য দেবতা, নররূপি সত্যনারায়ণ শ্রী শ্রী ঠাকুর রামচন্দ্র দেব কে নর দেহে হারিয়েছিলাম। ৬৯ বৎসর পূর্বের এই মুহুর্তগুলি কি ভোলা সম্ভব?
দেহরক্ষার পূর্বদিন, ১৭ বৈশাখ রাত্রিতে ঠাকুর যখন শয়ন করিবেন, তাহার পূর্বক্ষণে উপেন্দ্র বাবু ও নরেন্দ্র ভূঁঞাকে বলিলেন,"গত রাত্রি শেষে আমি তন্দ্রার ঘোরে দেখিলাম চন্দ্রলোক হইতে একখানা রথ নামিয়া আসিল, আমি তাহাতে উঠিয়া এখান হইতে চলিয়া গেলাম" ঠাকুরের পদ্মহস্ত তাঁহাদের মাথায় রাখিয়া আশীর্বাদ জানাইলেন, চিবুক ধরিয়া আদর জানাইলেন এবং মঙ্গল কামনা করিলেন। শ্রী শ্রী ঠাকুরের পরম ভক্তদ্বয় এই আদর, ভালোবাসার বিশেষসত্ব তো কোন ভাবে বুঝতে পারেন নাই। - এটাইতো তাঁদের জীবনে শ্রী শ্রী ঠাকুরের স্বশরীরের শেষ আশীর্বাদ!
পরদিন প্রাতে ঠাকুর সম্পূর্ণরূপে উলঙ্গ হইয়া শুইয়া আছেন- কন্ঠের তুলসীর মালা,পরিধানের কৌপীন ও বহির্বাস, গায়ের অঙ্গ রাখা ইত্যাদি ইহ লোকের যাবতীয় বেশ-ভূষা মেঝের উপর পড়িয়া আছে তিনি যেন ইহ সংসারের সর্ব প্রকার বন্ধন হইতে মুক্ত- যে সাজে পৃথিবীতে আসিয়াছিলেন,সে সাজই পুনরায় গ্রহন করিয়াছেন। উত্তর শিয়র হইয়া শুইয়া আছেন। দরজায় দাঁড়ানো একজন ভক্ত ঠাকুরের চোখ মুখের অবস্থান্তর দেখিয়া ভীত ও চকিত হইয়া বলিলেন " আপনারা দেখেন, ঠাকুরের চোখ মুখ কেমন হইয়া গেল!" উপেন্দ্র বাবু ত্রস্ত হইয়া মুখ তুলিয়া দেখিলেন ঠাকুরের দেহ অসাড়, গলায় একটু ঘড় ঘড় শব্দ শুনিতে পাইলেন। মুহুর্তে প্রলয় ঘটিয়া গেল। ঠাকুর নেই! সময় তখন দুপুর ১:৩০ মিনিট। ঠাকুর ৯০ বৎসরের ইহলীলা সাঙ্গ করিলেন।
শোনা যায়, পরম ভক্ত নরেন্দ্র ভূঁঞা সারা চৌমুহনী বাজার পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াচ্ছেন আর বলছেন- ঠাকুর নেই! ঠাকুর নেই! সে শোকাবহ বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো সহস্র সহস্র নর-নারী ঠাকুরের পরিত্যক্ত দেহ শেষ দেখার জন্য বাংলোর আঙ্গিনায় আসিয়া উপস্থিত হইল। পাহাড়তলী আশ্রমের মোহন্ত মহারাজ শ্যাম দাদা ফেনীতে অক্ষয় তৃতীয়া উৎসবাঙ্গন থেকে চৌমুহনী আসলেন। ঠাকুরের পাঞ্চভৌতিক দেহ দাহ কি সমাধিস্থ করা হইবে এবং সে কার্যটি কোথায় সম্পন্ন করা হইবে, ভক্তদের সমস্ত প্রশ্নের সমাধান মোহন্ত মহারাজ কিয়ৎকাল ধ্যানস্থ থাকিয়া এই প্রত্যাদেশ পাইলেন যে, চৌমুহনীর এই বাংলোতেই শ্রী শ্রী ঠাকুরকে সমাধিস্থ করা হইবে, সকলে সন্তুষ্ট চিত্তে তা মেনে নিলেন।
বাংলোর যে কক্ষে ঠাকুর বাস করিতেন সেই কক্ষই সর্বসম্মতিক্রমে সমাধিক্ষেত্র নির্বাচিত হইল। তখন আর এক সমস্যা উপস্থিত। এত অল্প সময়ে ইট, সুরকি,সিমেন্ট ইত্যাদি উপকরণ সংগ্রহ কিভাবে সম্ভব হইতে পারে। কিন্তু শীঘ্রই সে সমস্যার ও সমাধান হইয়া গেল। জনৈক ভক্তের ইট,বালি ইত্যাদি জিনিস সবই ছিল। তিনি তৎসমুদয় দিতে স্বীকৃত হইলেন। তৎক্ষণাৎ সে সকল জিনিস আনীত হইল। কি আশ্চর্য! যে পরিমান দ্রব্যের প্রয়োজন ঠিক সেই পরিমাণই পাওয়া গেল। মনে হইল ঠাকুর যেন বন্দোবস্ত পূর্বেই করিয়া রাখিয়াছিলেন। চারি হাত দীর্ঘ, চারি হাত প্রস্থ ও চারি হাত গভীর এক গর্ত খনন করিয়া, ঠাকুর যে খাটে, যে শয্যায়, যে মশারির নিচে শয়ন করিতেন, সে সব জিনিস সহ ভক্তগণ বাঞ্ছিত সে পবিত্র দেহ সমাধিস্থ করা হইল এবং গৃহভিত্তি হইতে দুই হাত উচ্চ এই বেদি নির্মাণ করিয়া সমাধি ঢাকিয়া দেওয়া হইলো।
মহাপ্রয়াণের পূর্বে ঠাকুর উপেন্দ্র বাবুকে একখানা নিত্য ব্যবহার্য কম্বল দেখাইয়া বলিয়াছিলেন,"গঙ্গার পাড়ে ঠান্ডা বাতাস, এই কম্বলখানা যেন সঙ্গে দেন।" কিন্তু প্রবল মানসিক চাঞ্চল্য হেতু উহা দিতে কাহারও স্মরণ ছিল না। ভক্তগণ একদিকে শোকাশ্রু, অপরদিকে প্রেমাশ্রু বিসর্জন করিতে করিতে হরি নামকীর্তন ও মুহুর্মুহু উলুধ্বনির মধ্যে সেই পরম পবিত্র, একান্ত - বাঞ্ছিত ও চির-সেবিত দেহখানা সমাধিস্থ করিলেন।
এভাবেই চৌমুহনীর বাংলো পরিণত হয়ে গেল- "শ্রী শ্রী ঠাকুর রাম চন্দ্র দেবের সমাধি ক্ষেত্র "
জয় গোবিন্দ
জয় রাম- গুরু সত্যনারায়ণ
১৩৫৬ বাংলার ১৮ই বৈশাখ ১৯৪৯ ইংরেজি ১মে অথবা অক্ষয় তৃতীয়া ১৩৫৬ বাংলার ১৮ই বৈশাখ ১৯৪৯ ইংরেজি ১মে অথবা অক্ষয় তৃতীয়া Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 08:40 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.