পতিসেবা: জীবনের প্রকৃত অর্থ ও পরম সাফল্যের পথ | শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী

 পতিসেবা: জীবনের প্রকৃত অর্থ ও পরম সাফল্যের পথ | 

পতিসেবার মাধ্যমে জীবনের অভ্যন্তরীণ সত্যের সন্ধান কীভাবে সম্ভব? শ্রী শ্রী রামঠাকুরের এই অমূল্য বাণী থেকে আমরা জানবো কীভাবে দেহের বন্ধন ছেড়ে পরম শান্তি ও আনন্দ লাভ করা যায়। এই ভিডিও আপনাকে দেবে সঠিক দিকনির্দেশনা।"

বেদবানী ৩ খন্ড /১৭৯ নং পত্রাংশ ,শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী 

 “ দেহেতে আবৃত হইলেই পতিসেবার প্রয়োজন হয়। কারণ দেহই হইয়াছে অভাবযোগ। যাহা কিছু প্রয়োজন সকলি দেহের যোগেতে হইয়া থাকে। জীবগণকে জন্মকালেই দীক্ষা করিয়া সৃষ্টি দেবতার মন্ত্র দিয়া দেয়। গুণের চঞ্চলতায় পরিয়া সেই উপদেশ ভুলিয়া যায়। পুনরায় সেই ভ্রমশোধন জন্য গুরুজন হইতে উপদেশ পাইয়া সেই পতি দেবতার সেবা পরিচর্য্যার তৎপর হইলে ক্রমে ক্রমে জ্ঞান স্ফুরণ হইয়া পরমস্মৃতি উদয় হয়। তখনই পরম দেবতার প্রকাশ পাইয়া পরম আনন্দেতে চিত্ত উল্লাস হইয়া পরে। সঙ্গে সঙ্গে পতিচরিত্র প্রকাশ পাইয়া সকল অভাবাদি অশান্তি দূরীভূত হয় এবং আত্মাকে জানিয়া আর মায়ামুগ্ধ হয় না। অতএব পতিসেবা করিতে সর্ব্বতোভাবে লিপ্ত থাকিতে চেষ্টা করিবেন।

 সকল বাসনা (বন্ধন) মুক্ত হইয়া পরম শান্তি লাভ করিতে পারিবেন। শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গ লাভ হইয়া থাকে। শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে অর্থ এই ‌:— নাশার পথ এবং মুখের পথের দ্বারা যে বাতাস (বায়ু) চলা ফিরা করে অর্থাৎ বাহির হয় আবার শরীরের মধ্যে যায়, ঐ বাতাস অনুসন্ধান করিতে করিতে ঐ বায়ু তত্ব বোধ হয়। বোধ হইলেই পূর্ব্বের সৃষ্টিকর্ত্তার উপদেশ মনে পরিয়া যায় (ইহাকেই পূর্ব্বস্মৃতি বলে।) তখন আমি কে, আমার কর্ত্তব্য কি ? আমি কেন তাপত্রয় যন্ত্রণা সংসারে ভোগ করিয়া থাকি এই সকল জানিতে পারে। ইহা জানিলে পর আর অনিত্যবিষয়গত ইন্দ্রিয় সুখের দাসত্ত ভুলিয়া পতিদেবতার দাসের দয়াও উপস্থিত ঘটিয়া থাকে। আত্মস্মৃতি জন্মীয়া যখন ধৈর্য্য ধরিতে চেষ্টা অবিচ্ছেদ হয় তখন যে অবস্থা দাঁড়ায় সেই অবস্থায়ই [?] “মন্ত্র” অর্থাৎ জন্মকালের উপদেশ পতিসেবার শক্তি জাগিয়া পরে। আত্মস্মৃতি অভাবে যে সকল মন্ত্রতন্ত্রাদি যোগ হয় তাহা সকলি মায়া ভুল। 

কাজেই মন্ত্রতন্ত্রাদি সাধু মহাত্মার উপদেশ স্থির করিতে পারা যায় না। এই সকল ক্রিয়া কর্ম্ম যাগ-যজ্ঞাদিকে মায়ামুগ্ধ অর্থাৎ ভ্রমমুগ্ধা “মরুভূম” বলিয়া থাকে। ইহা দ্বারা ভগবৎ তত্ত্ব জানা দূরে থাকুক ঐহিকের সুখভোগের অভাব ঘটিয়া পরে। যে পর্য্যন্ত আত্মবোধ না হয় সেই পর্য্যন্ত যে পতিকে পতি বলিয়া অভিমান করা যায় সেই পতিকেই অনন্যদেবতা জ্ঞানে ভগবানের স্বরূপ জানিয়া এবং ঐ পতিসেবাই মন্ত্রতন্ত্র বুঝিয়া পরিচর্য্যা করিতে করিতে অনাবরণ বিদেহীপদ ব্রহ্মতত্ত্ব সত্যবানকে অনাবরণ দ্বারা লাভ করিতে পারে। অতএব দিবানিশি যে পর্য্যন্ত কর্ত্তৃত্বাভিমান থাকে, যে পর্য্যন্ত পতিদেবতার কৃপা প্রকাশ না হয়, সেই পর্য্যন্ত ভগবৎস্বরূপ এই পতিদেবতার পরিচর্য্যা এবং পতিমুক্তির জন্য লালসা প্রদান করিয়া, অন্য অভিলাষ ছাড়িয়া, পতি দেবতার ছায়া স্বরূপ হইয়া তাঁহানকে প্রধান মনে করিয়া তাহানই প্রীতির জন্য সর্ব্বদা সতর্কভাবে তাহান অনুগ্ৰহের আশ্রয় জন্য প্রতিক্ষা করিয়া থাকিতে চেষ্টা করিবে। ইহাই সাধনা জানিবেন। 

ইহাকেই অভ্যাস যোগ বলিয়া জানিবেন। এই কর্ম্মের নামই ওঙ্কার ব্রহ্ম জানিবেন। অথবা শ্বাস টানিয়া নেওয়া এবং হৃদয়ে যতক্ষণ পারা যায় রাখা, যে যে মহাজনের নিকট যে যে উপদেশ লাভ হইয়াছে, তাহাই এই পতিদেবতার সেবার দ্বারায় দেহ ত্যাগ করা যায়, সেই বিদেহী অবস্থায় ইহার মর্ম্ম একই পদার্থ জানিতে পারে। ঐ পতিসেবা করিতে করিতে এই পতিই সাবিত্রীর ন্যায় কালের বিকৃতি তরঙ্গমালা অবিদ্যাজাল হইতে উদ্ধার করিয়া পরম শান্তিপথে লইয়া যায়। বেদপুরাণাদিতে ইহারই প্রহসন দেখাইয়া জীব মুক্তপথ খোলার উপায় দর্শন হইয়াছে জানিবেন। “ সর্ব্বধর্ম্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। অহং ত্বাং সর্ব্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ॥” এই শ্লোক উপনিষদ জানিবেন। ভগবৎ পদ হারা হইয়াই অহংকার কর্ত্তৃক অপহৃত হইয়া অশোকবনে বাসস্থান হয়। এখানে চেরীর অত্যাচার আবরণ সততই থাকে। অর্থাৎ সুখের জন্য যাহা কিছু চেষ্টা করা হয় তাহা পরিণামেই দুঃখ জানিতে পারেন। লোকের সুখই প্রার্থনা, দুঃখ কেহই চায় না। 

তবে দুঃখ কেন হয় ? ইহাতে বুঝিতে পারেন সুখের সঙ্গে দুঃখ আছেই। সর্ব্বদা সুখে -দুঃখে সমান বোধ করিলেই মন্ত্রাদি যাগযজ্ঞ উপাসনাদি প্রকাশ পাইয়া থাকে। পতিসেবা ছাড়া জগত উদ্ধারের উপায় আর কিছুই নাই। সুখ দুঃখ সমান করিবার জন্য একমাত্র পতিসেবা দুর্ল্লভ [?] হইয়া যায়। পতিসেবায়ই সুখ দুঃখ থাকে না — তাহার প্রমাণ দেখা যায় সাবিত্রী, বেহুলা, সীতা, শৈব্যা, চিন্তা, দময়ন্তী প্রভৃতির পতিসেবাই দ্বন্দ্ব মুক্ত করিয়া বিদেহীর আশ্রয় লাভ করিয়া অবিচ্ছেদ পতি ঈশ্বরে শ্রীসম্পদ ভগবানের আশ্রয় পাইয়া থাকে। এতৎভিন্ন কর্ত্তাভিমানে দক্ষযজ্ঞ অর্থাৎ শিব (শুভ) হীন যজ্ঞ হইয়া যায়। পতিদেবতাকে কর্ত্তৃত্বাভিমানসহ যাহা

 কিছু ইচ্ছাদির দ্বারা মনের বোধ হয় সকলি পতিকে দান করিতে করিতে অর্থাৎ ইচ্ছাদি পতিসেবায় নিযুক্ত করিতে করিতে সকল ঋণ মুক্ত হইয়া তাপময় দেহ সংসার ছাড়িয়া নির্ম্মল সত্যলোক অচলাভক্তি বিশুদ্ধ ভাবযোগে পরম আনন্দ চিরকাল অবিচ্ছেদ ভাবে ভোগ করিতে পারে। ইহাই সনাতন ধর্ম্ম, হিন্দু চর্চ্চা জানিবেন।

পতিসেবা বা সেবার প্রয়োজনীয়তা:

  • দেহের চাহিদাগুলি দেহধারণের সাথে আসে। জন্ম থেকেই আধ্যাত্মিক দীক্ষা দেওয়া হয়, কিন্তু জীবনের বিভ্রান্তিতে তা ভুলে যায়।
  • গুরু থেকে সেই আধ্যাত্মিক দীক্ষা পুনরুদ্ধার করলে "পতি" বা দেবতুল্য স্বামীর প্রতি ভক্তি করা সম্ভব হয়, যা আত্মচেতনায় পৌঁছানোর পথ খুলে দেয় এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি নিয়ে আসে।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ভূমিকা:

  • শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ জীবন ও এর মূল ভাবনা শেখায়। একে উপলব্ধি করলে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও আত্মার মুক্তি সম্পর্কে স্মৃতি জাগ্রত হয়।

ভৌত আকাঙ্ক্ষার পরিত্যাগ:

  • ক্ষণস্থায়ী ইন্দ্রিয়সুখের পরিবর্তে পরম "পতি"র সেবায় মনোনিবেশ করতে হবে। এ ধরনের ভক্তি জ্ঞান নিয়ে আসে এবং আত্মাকে মোহজাল থেকে মুক্তি দেয়।

চর্চা এবং মুক্তি:

  • পতিসেবা ব্রহ্ম বা চূড়ান্ত সত্য উপলব্ধির পথ। নিয়মিত ভক্তি দুনিয়ার মোহমুক্তি ঘটিয়ে আধ্যাত্মিক মুক্তি দেয়।

ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ:

  • গীতার শ্লোক ("সর্বধর্মান পরিত্যজ্য...") সর্বোচ্চ পথ হিসেবে আত্মসমর্পণের গুরুত্বকে তুলে ধরে। অহংকার ত্যাগ করে পরম ঈশ্বরকে পুরোপুরি নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।

আদর্শ ভক্তির উদাহরণ:

  • সাভিত্রী, সীতা প্রভৃতির কাহিনি নিঃস্বার্থ ভক্তির প্রতীক। এই ভক্তি সুখ-দুঃখের দ্বন্দ্ব অতিক্রম করে।

অহংকার ও ইহজাগতিক আকর্ষণ পরিত্যাগ:

  • সত্য ভক্তি ছাড়া অহংকার-চালিত আচার (যেমন দক্ষযজ্ঞ) মূল্যহীন। প্রকৃত মুক্তি আসে পরম ঈশ্বরের প্রতি একান্ত ভক্তি থেকে।

সনাতন ধর্মের সারকথা:

  • চিরন্তন পথ হল নিঃশর্তভাবে ঈশ্বরকে সেবা করা। এই ভক্তি চিরস্থায়ী আনন্দ ও শান্তি নিয়ে আসে, যা দুনিয়ার দুঃখ থেকে মুক্তি দেয়।

এটি আধ্যাত্মিক জীবনের দিকনির্দেশনা এবং ভক্তির গভীরতা তুলে ধরে।

"পতিসেবার মাধ্যমে আত্মবোধ ও মুক্তির পথ সম্পর্কে আমরা এই আলোচনা করলাম। এই জ্ঞানকে জীবনে প্রয়োগ করলে জীবনের আসল উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা সম্ভব। যদি ভিডিওটি ভালো লাগে, তবে লাইক, শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। শ্রী শ্রী রামঠাকুরের অন্য বাণীগুলো জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।"

#পতিসেবা #শ্রীশ্রীরামঠাকুর #আধ্যাত্মিকতা #সনাতনধর্ম #ভক্তি #বেদবাণী #মুক্তিরপথ #আধ্যাত্মিকজীবন

#পতিসেবা #শ্রীশ্রীরামঠাকুর #আধ্যাত্মিকতা #সনাতনধর্ম #ভক্তি #বেদবাণী #মুক্তিরপথ #আধ্যাত্মিকজীবন

Point-by-Point Explanation of the Passage

This excerpt emphasizes spiritual discipline, the surrender of ego, and devotion to the supreme deity, conceptualized as the "Pati" or divine husband. Below is a simplified explanation:

  1. Necessity of Service (Patisēvā):

    • The body has needs, and these needs arise from being embodied. Spiritual guidance is given at birth but is often forgotten due to life's distractions.
    • Recollection of this spiritual advice through a Guru enables one to serve and honor the divine "Pati," eventually leading to self-awareness and inner peace.
  2. Role of Breath (Prāṇa):

    • Observing the breath teaches the essence of life. Realizing this can awaken memories of one's divine purpose, enabling introspection about one's existence and liberation.
  3. Abandonment of Material Desires:

    • One should prioritize service to the divine over fleeting worldly pleasures. Such devotion brings wisdom, enabling the soul to break free from illusions.
  4. Practice and Liberation:

    • Patisēvā becomes the path to understanding Brahma, the ultimate reality. Through consistent devotion, worldly attachments dissolve, leading to spiritual liberation.
  5. Surrender to the Divine:

    • The Gita's verse ("Sarva dharman parityajya...") underscores surrender as the ultimate spiritual path. This entails relinquishing ego and dedicating oneself entirely to the divine.
  6. Examples of Ideal Devotion:

    • Stories of Sāvitrī, Sītā, and others symbolize unwavering dedication. Such devotion transcends dualities like happiness and sorrow.
  7. Rejecting Ego and Worldly Attachments:

    • Ego-driven rituals without true devotion (e.g., Dakṣa's yajña) lack substance. True liberation comes from total surrender to the divine and serving through pure intent.
  8. Sanātan Dharma’s Essence:

    • The eternal path lies in unconditional service to the divine. This devotion brings everlasting joy and peace, free from worldly suffering

জয়রাম জয়গোবিন্দ 

পতিসেবা: জীবনের প্রকৃত অর্থ ও পরম সাফল্যের পথ | শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী পতিসেবা: জীবনের প্রকৃত অর্থ ও পরম সাফল্যের পথ | শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ on 16:13 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.