পিতাঠাকুর— "কি করিয়া যাইবেন?” ঠাকুর কেন? দিব্যরথে। একটু পরে বড়দি আসিয়া ঠাকুরকে সন্ধ্যারতি করিলেন •
পরদিন সকাল ৯টায় ডাক্তার শচীন্দ্রবাবু আসিয়া ঠাকুরের চোখ পরীক্ষা করিয়া ঔষধ পরিবর্তন করিয়া চলিয়া গেলে ঠাকুর বলিলেন, আর কটা দিন এইখানে দেইখা কলকাতা চইলা যামু। সেইখানে গিয়া যদি দৃষ্টিশক্তি ফিরা পাই। এই চোখের জন্য তোমাগরে বড় বিব্রত করছি। আমি— “আমাদের কোন অসুবিধা হয় না। আনন্দই পাই।”
এই সময় আমি বলিলাম— "নাম করতে বসলে মন বিভিন্ন স্থানে ও বিষয়ে ঘুরে বেড়ায়। নাম হয় না। কি নাম দিলেন?” ঠাকুর বলিলেন— তোমার পূর্বজন্মের সাধিত নাম শুনাইছি, নাম দেই নাই। মাতৃজঠরেও নাম শুনাইছিলাম। প্রকৃতির রাজ্যে আইসা নাম ভুইলা গেছ। পুনরায় নাম স্মরণ করাইয়া দিছি। নাম করে শিবরূপী প্রাণে। নাম আবরণহীন। তাই মনের সঙ্কল্প বিকল্পের অপেক্ষা রাখে না, অবিরাম নাম হয়। নাম শুনতে মন লাগে না। মন যেইখানে ইচ্ছা ঘুইরা বেড়াউক। তুমি নাম শুনার জন্য চেষ্টা করবা। মনের দিকে লক্ষ্য রাখবা না। লক্ষ্য রাখবা নামের দিকে। মনের গতি চিরচঞ্চল। যত চঞ্চল হউক, আর যেইখানে যাউক না কেন ফিরা আবার নিজের জায়াগায় আসব। ফিরা আইসা তুমি যেই নাম শুনছ, মনও সেই নাম শুনতে পাইব। তুমি সর্বদা নাম শুনবার জন্য অভ্যাস কর। তা হইলে মনও বিষয়াত্তর থাইকা ফিরা আইসা নাম শুনতে শুনতে ক্রমে ক্রমে চঞ্চলতা ত্যাগ কইরা স্থির ভাব ধারণ করব। তখন মন প্রাণের সঙ্গে যুক্ত হইয়া মঞ্জুরী হইয়া যাইব। ধ্যানের উদয় হইব ।
প্রশ্ন- “ধ্যান বলে কাকে?”
ঠাকুর— তৎ-ময় হওয়ারে ধ্যান বলে।
প্রশ্ন— “ত-ময় কি কিছুই বুঝতে পারলাম না।” ঠাকুর— তৎ হইল প্রাণ, আর ময় হইল মিশা, একাকার হইয়া যাওয়া।
মন ও মনের বিষয়গুলি এবং বুদ্ধি, অহঙ্কার প্রাণের সঙ্গে মিশা যাওয়ার নাম তন্ময়তা। শুধু শুইনা বুঝবার চেষ্টা করলে বুঝা হয় না, কার্য কইরা বুঝলেই বুঝা হয়। ধ্যান করলে তবে বুঝতে পারবা। অভ্যাসের দ্বারা অসম্ভব সম্ভব হয়। এই পুরুষকার লক্ষীরূপা।
প্রশ্ন— “মনের বিষয়গুলি কি ?”
ঠাকুর— দশ ইন্দ্রিয়।
No comments: