রমণী বললেন ,
না , না , আমার অনেক শিক্ষা হয়েছে ,
আমি সকলের সঙ্গেই প্রসাদ পাব ।
আর আলাদা নয় ।
লোকজনের আগমন অনেক হয়েছিল ।
সেই জন্য ছাদ পরিষ্কার করে আসন বিছাতে কিছু
সময় লাগবে ,
এই ভেবে কানাইবাবু নিচের ঘরে জায়গা করলেন এবং
সেখান যাদেরস্থান সঙ্কুলান না হবে তাদের জন্য ছাদে ব্যবস্থা করার কথাও বলে দিলেন ।
নিচের ঘরে যারা বসেছেন তাদের পরিতুষ্ট করে
প্রসাদ পাওয়াতে তৎপর পরিবেশকরা আর কানাইবাবুও হাতজোড় করে প্রত্যেকের কাছে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ।
একটি বিধবা রমণী প্রসাদ পেতে পেতে বারবার একটি
লোকের দিকে তাকাচ্ছিলেন ।
কয়েকবার তাকিয়ে তিনি সহসা প্রসাদ ফেলে
ঘর ছেড়ে বেরোলেন ।
বিপন্ন বোধ করলেন কানাইবাবু ও বিব্রতবোধ করলেন অন্য সকলেই , কি ব্যাপার !
ঘরের বাইরে ঐ রমণীর পা দুটি জড়িয়ে ধরে কানাইবাবু
কেঁদে উঠে বললেন ,
" মা , কি অপরাধে আপনি প্রসাদ ফেলে উঠে এলেন ?
রমণীটি গলার স্বর সপ্তমে তুলে বললেন ,
পনের বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল ,
সতের বছর বয়সে তিনি বিধবা হয়েছেন ,
সেই থেকে তিনি কাশীতে এতোকাল কাটাচ্ছেন ।
নাম সংকীর্তন শুনে এই বাড়িতে তিনি ঢুকেছিলেন প্রসাদ পাওয়ার জন্য ,
কিন্তু তার পাড়ার নাপিত টা উল্টো দিকে বসে
প্রসাদ পাচ্ছিল ,
এমন অনাসৃষ্টি কাণ্ড এখানে ।
জাতপাত সব বিসর্জন দিয়ে এখানে প্রসাদ পেতে হবে
জানলে তিনি কখনই এই বাড়িতে ঢুকতেন না ।
কানাইবাবু ও আরো পাঁচজন বললেন যে ,
তার জন্য অন্য ঘরে আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে এক্ষুণি ,
তবুও তিনি যেন অর্ধভুক্ত হয় চলে না যান ।
" এখানে সব শ্লেচ্ছদের কারবার "
বললেন বিধবা রমণী ।
তিনি ভাল করেই বুঝেছেন জাত ধর্ম না খুইয়ে কেউ
এখানে প্রসাদ পেতে পারবেন না ।
কানাইবাবুর পা ধরে অনুরোধ করাও ব্যর্থ হল ,
ব্যর্থ হল উপস্থিত অনেকের অনুনয় অনুরোধ ।
দ্রুত চরণে রমণী শীতেহিমে কুয়াশায় ঢাকা কাশীর গলির
পথে অন্তর্হিতা হয়ে গেলেন ।
ভেঙ্গে পড়লেন কানাই বাবু ।
নির্বাক হলেন অন্য সকলে ।
কানাই বাবু ভাবলেন ,
কিছুই তো আর করার নেই ,
যে ত্রুটি হয়েছে সে সংশোধনের শক্তি তার নেই ।
এখন কর্তব্য বাকি যারা প্রসাদ পাচ্ছেন তাদের দেখাশোনা করায় যেন বিন্দু মাত্র ত্রুটি না থাকে ।
মিনিট পাঁচেক পরে একজন এসে খবর দিল
ঐ রমণী আবার আসছেন ।
রুদ্ধশ্বাসে কানাইবাবু ছুটে গেলেন তার সামনে ।
এই কি বীভৎস কাণ্ড !
রমণীর দুই গণ্ড বেয়ে রক্ত ঝরছে ,
রক্ত ঝরছিল তার দুই বাহু থেকেও -- -
এমন সর্বনাশ তার কে করল ?
রমণীটি জানালেন ,
তিনি কিছু দূর অগ্রসর হয়েছেন ,
এমন সময় দুইদিক থেকে দুইটি বানর এসে তার গণ্ডদেশে চপেটাঘাতের পর চপেটাঘাত করে যাচ্ছিল ।
বাহু দুটোও তার কামড়াতে কশুর করেনি ।
সেই কারণেই এই রক্তক্ষরণ ।
কানাই বাবু তাড়াতাড়ি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন , ঘরে তার নববস্ত্র ছিল না ।
সেই জন্যই কিছুক্ষন আগে ঠাকুরকে দেওয়া থান- ধুতি
ও শীত- উত্তরীয় তার হাতে তুলে দিলেন ।
আর তুলে দিলেন তার হাতে কুড়ি টি টাকা ।
নিজের চেম্বারের ঠিকানা দিয়ে বললেন ,
কাল থেকে তার চিকিৎসার সমস্ত ভার তার ।
একজনকে কানাইবাবু বললেন ,
আলাদা জায়গায় ওর প্রসাদ পাওয়ার ব্যবস্থা
করে দিন শীঘ্রই ।
রমণী বললেন ,
না ,না , আমার অনেক শিক্ষা হয়েছে ,
আমি সকলের সঙ্গেই প্রসাদ পাব ।
আলাদা আর নয় ।
বেশ গুছিয়ে পরিতোষের সঙ্গে প্রসাদ পেলেন
রমণীটি । যাবার সময় করজোড়ে সকলকে প্রণাম জানিয়ে হাসিভরা মুখে তিনি চলে গেলেন ।
উপস্থিত সকলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেন ।
জয় রাম জয় গোবিন্দ ।
ফনীভূষণ চক্রবর্ত্তী ।
শ্রুতিতে রামঠাকুর ।
পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৮ হইতে ।
ধর্মের শিক্ষা: সমতা ও উপলব্ধির আলো | নীতি গল্প | জয় রাম জয় গোবিন্দ
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
21:52
Rating:

No comments: