" সংসারে থাকিয়া ভগবৎ সেবায়



গুরু কৃপাহি কেবলম 



শ্রীশ্রীঠাকুর আমার সর্ব্বজ্ঞ ।
আমাদের মনের কথা আরেক জনকে এমনভাবে বলিতেন যে ,তাহাতে মনে হইত আমাদের মনে
যেসব চিন্তার উদয় হইয়াছিল ,
তাহা বুঝি অকপটে শ্রীঠাকুরকে বলিয়াছি ।
বহুদিন পর্য্যন্ত আমার কোন সন্তানাদি হয় নাই ।
আমি ও আমার স্ত্রী মহা আনন্দে শ্রীঠাকুরের সহিত যত্রতত্র বেড়াইতাম ।
এইসময় আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হইলেন ।
আমার মনে সংসারের প্রতি কেমন যেন একটা উদাসীন
ভাবের উদয় হইল ।
মনে করিলাম , এই বুঝি সংসার একটু একটু করিয়া জড়াইতে আরম্ভ করিল ।
স্থির করিয়া বসিলাম ,
সকলের অগোচরে গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইব ।
ভাবী সন্তানের জন্য কোন চিন্তাই হইল না ।
আমি জানি আমার শিক্ষিতা স্ত্রী নিজের সন্তানের ভার অনায়াসে বহন করিতে পারিবেন ।
তাহা ছাড়া , তাঁহাদের সঙ্গে রহিলেন শ্রীঠাকুর ,
স্বয়ং ভগবান ।
আমার মনে কোন চিন্তা ব ভয় রহিল না ।
স্থির করিলাম , সুযোগ পাইলেই দুই-এক দিনের মধ্যেই গৃহ ছাড়িয়া পলায়ন করিব ।
এই কথা কাহাকেও বলি নাই ।
আমি একটি ঘরে রাত্রিতে একাই শয়ন করিতাম ।
পাশের ঘরে আমার স্ত্রী ও আমার অল্পবয়সী বিধবা ভগনীর সহিত শয়ন করিতেন ।
নির্দ্ধারিত দিনে খাওয়ার পরে গিয়া শুইয়া পারিলাম ।
আমার স্ত্রী অন্যান্য দিনের মত পান ও জল লইয়া আসিলেন , কিন্তু অবাক হইয়া দেখিলাম যে ,
তিনি নিজের শয়ন ঘরে না যাইয়া আমারই শয়নঘরে রহিলেন ।
তাঁহার এই কার্য্যকলাপে আমি বিস্মিত ও
বিরক্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম ,
তুমি এখানে এলে কেন ?
স্ত্রী বলিলেন , আজ এখানেই শয়ন করিব ।
আমি বলিলাম , তোমার এ কোন্ আবদার ?
যুবতী বোন একাকী ঘরে শয়ন করিবে ,
আর আমরা দুজনে এখানে শয়ন করিব ,
ইহা কখনো হইতে পরে না ।
তুমি ঐ ঘরে চলিয়া যাও ।
আমার স্ত্রী তখন কাঁদিয়া ফেলিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন ,
তুমি নাকি আমাদের ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছ ?
এই প্রশ্নে আমি অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলাম ,
যে কথা একমাএ আমি নিজেই জানি ,
এ জগতের কাহাকেও মুখ খুলিয়া বলি নাই ,
সে কথা আমার স্ত্রী কি করিয়া জানিলেন ?
আমি বলিলাম , কে তোমাকে এই কথা বলেছে ?
আমার স্ত্রী কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিলেন ,
আগে তুমি প্রতিজ্ঞা কর , যতদিন আমি বাঁচিয়া থাকিব তুমি গৃহত্যাগ করিবে না ।
তাহা হইলে আমি সবই বলিব ।
অগত্যা স্ত্রীর নিকট কথা দিতে হইল ,
তিনি বাঁচিয়া থাকিতে গৃহত্যাগ করিব না ।
তখন আমার স্ত্রী বলিলেন ,
শ্রীঠাকুর আমাকে ও তোমার বোনকে বলিয়াছেন যে , রোহীনীবাবু গৃহত্যাগ করিয়া যাইতে মনস্থ করিয়াছেন । আপনারা তাহাকে ধরিয়া রাখার চেষ্টা করেন ,
কিছুতেই যেন পালাইতে না পারেন ।
শ্রীঠাকুরের উপর খুবই অভিমান হইল ।
সারা রাত্রি আর ঘুম হইল না ।
প্রভাতে হাত-মুখ ধুইয়া শ্রীঠাকুরের ঘরে প্রবেশ করিলাম ।
শ্রীঠাকুর আমাকে দেখিয়াই হাসিতে লাগিলেন ।
খাতা-পেন্সিল লইয়া ছবি আঁকিয়া আমাকে
বুঝাইতে লাগিলেন যে , সংসার ত্যাগ না করিয়া বরং
সংসারে থাকিয়া ভগবৎ সেবায় আত্মোৎ্সর্গ করিলে মুক্তিলাভ সহজ হয় ।
এতক্ষণ পরে শ্রীঠাকুরকে বলিলাম ,
এমন ভাবে আমাকে জব্দ না করিয়া এই সকল কথা তো
আগেই আমাকে বুঝাইতে পারিতেন ।
এই কথা শুনিয়া শ্রীঠাকুর একটু হাসিয়া অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করিলেন ।
সেই দিন হইতে আর সংসার ত্যাগের বাসনা
কোন দিনই মনে আসে নাই ।
রোহীনী কুমার মজুমদার ।
" শ্রীগুরু শ্রীশ্রীরাম ঠাকুর "
পৃষ্টা সংখ্যা ৪৬ হইতে ।
No comments: