জয় রাম

বেদবাণী ৩/১২৫ অবলোকন করিলে বুঝতে পারি (গ্রহরূপী জনার্দ্দন) " ভগবানের নাম করিতে করিতে গ্রহবৈগুণ্যসকল সহজ ভোগ কাটিয়া যায়।"
বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর রাজার মনে শান্তি নেই, কারণ তিনি অপুত্রক। শেষ পর্যন্ত অনেক দান ধ্যান করে ঠাকুরের অশেষ কৃপাতে রাজার ঘরে আলোকিত করে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিল। রাজ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।
রাজ- আচার্য্য এলেন পুত্রের জন্মক্ষণ অনুযায়ী গগনা করতে। কিন্তু গননার ফলাফল না বলে তিনি চুপ করে রইলেন। রাজার জিজ্ঞাসার উত্তরে রাজ- আচার্য্য বললেন, আমি গননার কথা বলতে পারছি না, আমি বাক্য উচ্চারণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। মহারাজ বললেন, " আপনি গননায় যা পেয়েছেন তা নির্ভয়ে বলুন।
আচার্য্য বললেন, " মহারাজ! রাজকুমারের পরমায়ু মাত্র এক বছর।
এর প্রতিবিধান কি??
রাজার আদেশে সাধু সম্মেলনের আয়োজন করা হ'ল। ছেলের একবছর পরমায়ুর জন্যে কেউ বিধান দিলেন শান্তি স্বস্ত্যয়নের, কেউ বা যজ্ঞানুষ্ঠানের।
কিন্তু রাজার জিজ্ঞাসা -- এতে কি যুবরাজের পরমায়ু বাড়বে? এই প্রশ্নে সকলেই নিশ্চুপ!
তখন এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে বললেন, " আমি কোন পূজার ধার ধারিনা-- আমি মুণিও না ঋষিও না।তবে যুবরাজের জন্যে শুধু হরিনামের ব্যবস্থা করতে বলছি।
যুবরাজের পরমায়ু শেষ হবার সাত দিন পূর্বে এই যজ্ঞটি আরম্ভ হবে- সাতদিন সাতরাত অবিশ্রান্তভাবে হরিনাম কীর্তন হবে।কীর্তন আরম্ভের পূর্বে যুবরাজকে নিয়ে মহারাণী কীর্তনের কুঞ্জে মধ্যস্থলে থাকবেন- কোন অবস্থাতেই কীর্তনের আসরের বাইরে আসতে পারবে না। রাজপুত্রের পরমায়ু শেষ হওয়ার ছয়দিন পূর্বে এবং পরমায়ু শেষ হবার একদিন পর সহ সাতদিন হরিনাম কীর্তন করতে হবে। একমাত্র নামের শক্তিতে যুবরাজের পরমায়ু বাড়তে পারে। তা ছাড়া পৃথিবীর আর কোন শক্তি কারও শক্তি নেই।"
সেই বৃদ্ধের কথামত যথানিয়মে হরিনাম সংকীর্তন আরম্ভ হ'ল। সাতদিন সাত রাত পার হয়ে হরিনাম যজ্ঞ শেষ হ'ল।
এদিকে যথাস্থানে নারায়ণ বসে আছেন।ব্রহ্মা, বিষ্ণু মহেশ্বর আছেন। এমন সময় যমরাজ বললেন," কীর্তনে বিভোর হয়ে আমি আমার কর্তব্য পালন করতে পারিনি।যুবরাজকে নেওয়া হয়নি। গত একদিন আগে যুবরাজের আয়ু শেষ হয়ে গেছে।
যমরাজের বিষন্ন বদন দেখে নারায়ণ যমরাজের কাছে পরমায়ুর খাতাটি চেয়ে নিলেন। এদিকে এই সাতদিন ধরে নারায়ণও তো কীর্তনের আনন্দে বিভোর ছিলেন। তাঁর চোখের কাজলের সঙ্গে অষ্ট সাত্ত্বিক ভাবের লক্ষণ অশ্রু ও ঘর্ম মিশে ছিল। তিনি তখন পরমায়ুর খাতাটি দেখছিলেন, তখন কোন ফাঁকে ঐ ছেলের নামের পাশে যেখানে এক (১) লেখা ছিল, তার পাশে কাজলের একটি বিন্দু পড়ে গেল-- নারায়ণ সেটি লক্ষ করেননি।
সুতরাং বিন্দু যুক্ত হয়ে ১ টি ১০ তে পরিণত হ'ল। ধর্মরাজকে ফেরৎ দিয়ে তিনি বললেন, ধর্মরাজ, আপনি বলছেন এক বছর, কিন্তু আমি দেখছি দশ বছর।
ব্রহ্মা এবার খতিয়ানটি হাতে নিয়ে দশ এর পাশে আর একটি বিন্দু দিলেন।এবার যুবরাজের পরমায়ু হয়ে গেলো ১০০ বছর।
মহেশ্বর বললেন, " আমি একটু দেখি। " তিনি খতিয়ানটি হাতে নিয়ে একশর পাশে একটি বিন্দু বসিয়ে দিলেন। এবার যুবরাজের পরমায়ু হয়ে গেলো এক হাজার বৎসর।
ধর্মরাজ ভাবলেন সকলেই যখন পরমায়ু বাড়ালেন আমি বাদ যাব কেন? তিনি এবার আর একটি বিন্দু বসালেন, যার ফলে যুবরাজের পরমায়ু দশ হাজার বছর হয়ে গে'ল।
তাহলে দেখা যাচ্ছে নামের অসীম ক্ষমতা।
শ্রী ঠাকুর বলেছেন," হরির নাম রাখিলে, নিত্য হরির নাম করিতে করিতে সকল ব্যারামই সারিতে দেখা যায়।" ১/৩৬৬
No comments: