“সত্যকে সর্ব্বদা আহরণ করিবে”















🙏দাম্ভিকতা, অহংকার, আত্মাভিমান বা আমিত্ব🙏
এই সমূহ তমোগুণ। তমোগুণ, দেহে আবদ্ধ জীবাত্মাকে পরমাত্মার সহিত মিলিত হইতে দেয় না। অর্থাৎ এই সকল তমোগুণ সম্পন্ন দেহীর পক্ষে কৈবল্যপ্রপ্তি সম্ভব হয় না। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর সর্ব্বদা এগুলো পরিত্যাগের উপদেশ দিতেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তৃতীয় আধায়ে ২৭ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন-
প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্ম্মাণি সর্ব্বশঃ।
অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা কর্ত্তাহমিতি মন্যতে॥
অর্থ - হে অর্জুন! "প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ কর্ম্ম সমস্ত রকমেই প্রকৃতির গুণসমূহের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েই কৃত হয়ে থাকে; তবুও যার অন্তঃকরণ 'অহং' এর অহঙ্কারে মোহিত আছে, সেইরকম অজ্ঞানী 'আমিই কর্ত্তা' এইরকম মনে করে।"
শ্রীশ্রীরামঠাকুর বলেছেন," ভগবান সর্ব্বজ্ঞ, সমভাব, নিরপেক্ষ শক্তি। কাজেই জীব তাহার কর্ত্তৃত্ববুদ্ধি বা অহংকার না ছাড়িলে এই নিরপেক্ষ শক্তি লাভের যোগ্যতা অর্জন করিতে পারে না।"
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা বলেছেন,”নিজেকে বড় না করে তাঁকে(ঈশ্বর) বড় কর। নিজে কর্তা না সেজে তাঁকে কর্তা জ্ঞান করার চেষ্টা কর, তাহলেই ত্যাগ আসবে।"
মহাযোগী শ্রীশ্রীমৎ স্বামী দয়ানন্দ অবধূত বলেছেন,”আমিত্ববোধ যতক্ষণ, অশান্তি ততক্ষণ।"
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন, “অবিদ্যারই তরঙ্গ হয়, বিদ্যা অবিদ্যা দুইভাগ ইহাকেই দ্বন্দ্ব বলে। ইহা হইতেই মন, বুদ্ধি, অহংকার উৎপন্ন হইয়া থাকে জানিবেন। শত চেষ্টা করিয়াও লোকে ভাগ্যের অতিরিক্ত কিছুই লাভ করিতে পারে না। মধ্য হইতেই দ্বন্দ্বই উপভোগ ভুগিতে হয়।" (বেদবাণী- ৩/ ২০)
শ্রীশ্রীমৎ ত্রৈলঙ্গ স্বামীজী বলেছেন "গর্বিত হবে না। যে ব্যক্তি শাস্ত্রের মর্ম জেনেও পালন করে না, সে পাপী হতেও অধম।"
শ্রীশ্রীরামঠাকুর বলেছেন, “ --- কর্ত্তা ছাড়িয়া সত্যের দাস অভিমানের শক্তিতে সকলি পাওয়া যায়। কর্ত্তা হইয়া ভাগ্যের বেশী কিছু পায় না জানিবেন।“ (বেদবাণী ৩/ ২১)
শ্রীশ্রী নিগমানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন,"মানুষের যত প্রকারে পতন হইতে পারে, আপনাকে 'বড় 'মনে করা সর্বাপেক্ষা প্রধান। কারণ যে অবিদ্যা গ্রস্ত, বুঝিতে পারে না তাহার বাক্য বা কার্য কোথায় তাহাকে পৌছাইয়া দিতেছে। সাধকের অভিমান ই সর্বাপেক্ষা ভয় প্রদ। অভিমানকে সুরাপান, প্রতিষ্ঠাকে বিষ্ঠা-তুল্য মনে করিয়া গাছের মতো সহিষ্ণু হইয়া সাধন করতে হয়। মায়া কাহাকে কোন ভাবে পতনের দিকে টানিয়া লয়, তাহার রহস্য বুঝা কঠিন। সুতরাং সাবধানে চলিতে হইবে। ভূতে পাইলে ভূতগ্রস্ত তাহা কোন দিন বুঝিতে পারে না।"
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন, ”সত্যের দাসের কোন বন্ধন থাকে না। অহংকারের দাসের কোন অভাব যায় না জানিবে।“ (বেদবাণী, সাধ্য ও সাধন তত্ত্ব, প্রথম খণ্ড ৩৫৪)।
শ্রীশ্রী ত্রৈলঙ্গ স্বামীজী বলেছেন, "পঞ্চভূত, ইন্দ্রিয় সকল, বুদ্ধি, মন এবং অহংকার ইহারা মায়া-বশত সংসারের সৃষ্টি ও রক্ষা করণে সমর্থ এই জন্য ইহারা ত্যাজ্য, কারণ ইহারা কেবল বন্ধনের কারণ।"
সাঁই বাবা বলেছেন, “ক্রোধ, অহংকার, হিংসা সবচেয়ে বড় রোগ। এই তিনটি রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখ।"
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, “অহংকার ত্যাগ করে তাঁর শরণাগত হও; সব পাবে। যখন বাহিরে লোকের সঙ্গে মিশবে, তখন সকলকে ভালবাসবে, মিলে মিশে যেন এক হয়ে যাবে-বিদ্বেষভাব আর রাখবে না।"
শ্রীশ্রীরামঠাকুর বলেছেন, “বৃথা কর্ত্ত্বৃত্বাভিমান জাগরণ করিতে নাই।“ (বেদবাণী, সাধ্য ও সাধন তত্ত্ব ১/২৯)।
শ্রীশ্রী সীতারামদাস ওঙ্কাকারনাথদেব বলেছেন, "দেহহমতি যা বুদ্ধিরবিদ্যা সা প্রকীর্ত্তিতা"- 'আমি দেহ' এই বুদ্ধি অবিদ্যা। এই দেহাত্মবুদ্ধিই থাকবে না, দেহাত্মবুদ্ধি নষ্ট হলে আর দুঃখ শোক থাকবে না। যত দুঃখের মূল কারণ এই দেহেতে আত্মাভিমান।"
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন, “শরীরের উপরই যখন কাহারো কোন কর্তৃত্ব নাই তখন স্ত্রী পুত্র ভাই বন্ধুর উপর কর্তৃত্ব কি করিয়া হইতে পারে?” (বেদবাণী, সাধ্য ও সাধন তত্ত্ব ১/৭২)
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন,"অহংকার তমোগুণ, অজ্ঞান থেকে উৎপন্ন হয়।"
শ্রীশ্রীরামঠাকুর বলেছেন, “কাহারো দোষ গুণ লইবেন না, পক্ষপাত দোষে আত্মার মলিন জন্মে অহংজ্ঞান কর্ত্তৃত্বহেতু হইয়া থাকে। কর্ত্তৃত্বাভিমান ছাড়িবার জন্য মনে বিচার করিয়া আত্মার সঙ্গে নির্ম্মলভাবে আত্মারই কর্ত্তার অধীন হইয়া থাকিলে নিত্যমুক্ত হইয়া পরিণামে শ্রীগুরুর পদ পাওয়া যায়। হৃদয়ের সংশয় ছেদন করিয়া সবল হইয়া থাকিলে অপার আনন্দ তাহাকে অধিকার করে।“ (বেদবাণী, সাধ্য ও সাধন তত্ত্ব ১/৮৮)।
শ্রীশ্রী বামাক্ষ্যাপা বাবা বলেছেন,” ‘আমি’ আর ‘আমরা’ শব্দ দুটো হলো মায়ার ফাঁদ।“
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা বলেছেন,"যতক্ষণ তোর ‘অহংভাব’ থাকবে ততক্ষণই তুই মূর্খ ও বদ্ধ। ঐ ‘অহংভাব’ ক্ষয় হলে তবে তোর চিত্তশুদ্ধি ঘটবে। চিত্তশুদ্ধি ঘটলে তোর আত্মতত্ত্ব বোধ হবে। তখনই তুই জ্ঞানী ও মুক্ত।"
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন, “ "আমি" হইল মন,"আমার"হইল বুদ্ধি অর্থাৎ বোধ ৷ এই মন ও বুদ্ধির বেগ ধৈর্য ধইরা থাকতে থাকতে মানুষ যখন "আমি", "আমার" এই দক্ষ যজ্ঞ, নামযজ্ঞের প্রভাবে ভুলতে পারবে তখনই হইল সত্যনারায়ণ প্রতিষ্ঠা ৷ অতএব সত্যনারায়ণের নামের শরণ লইতে অভ্যাস করবেন৷ চিরকাল কর্তৃত্ব কইরা কি লাভ করছেন? আপনের ভাগ্যের অতিরিক্ত কিছুই পান নাই ৷ কর্তা হইতে যাইয়াই অপার অভাব চিন্তায় সর্বদা কষ্ট ভোগ করতেছেন ৷ জানবেন, আপনে কর্তা নন ৷ যদি কর্তা হইতেন তবে আপনের বাসনা অনুযায়ী সকল কার্য কেন সফল করতে পারেন না? তাই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-য় শ্রীভগবান বলছেন —
"ন কর্তৃত্বং ন কর্মাণি লোকস্য সৃজতি প্রভুঃ ৷
ন কর্মফলসংযোগং স্বভাবস্তু প্রবর্ততে ৷৷"--৫/১৪
অর্থাৎ,আত্মারূপ প্রভু লোকের কর্তৃত্ব সৃষ্টি করেন না,কর্মফলের সহিত তাঁর কোন সম্বন্ধও নাই ৷ যে বস্তুর যেমন স্বভাব সেই অনুসারে কার্য হয় ৷
শ্রীশ্রী ত্রৈলঙ্গস্বামী বলেছেন, “গর্বিত হবে না। যে ব্যক্তি শাস্ত্রের মর্ম জেনেও পালন করে না, সে পাপী হতেও অধম।“
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা বলেছেন,"অহং চলে গেলে নিজের মনই নিজের গুরু হয়। সৎ ও অসৎ বিচার আসে। জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির মণিকাঞ্চন যোগ হলে শ্রদ্ধা হবে তোদের আশ্রয়। শ্রদ্ধা হবে তোদের বান্ধব এবং শ্রদ্ধাই হবে তোদের পাথেয়।“
শ্রীশ্রী মহর্ষি মনোমোহন বলেছেন,"তোমার আমিত্বে যাহা করে আকর্ষণ, আদেশ জানিয়া তাহা করিবে বর্জন।“
শ্রীশ্রী নিগমানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন,"অহংজ্ঞান থাকিতে ভগবান-নির্ভরতা আসে না। যখনই অহংজ্ঞান চূর্ণ হইবে, তখনই ভগবান-নির্ভরতা আসিবে।"
শ্রীশ্রী শ্রীমৎ ত্রৈলঙ্গস্বামী বলেছেন,"ভালোবাসা দ্বারা ক্রোধ জয় কর। মঙ্গল দ্বারা অমঙ্গল জয় কর । পরার্থপরতা দ্বারা স্বার্থপরতা জয় কর । সত্য দ্বারা মিথ্যা জয় কর।"
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন,"ধৈর্য্যই ধর্ম্ম, ধৈর্য্যই কর্ম্ম, ধৈর্য্যই জ্ঞান, ধৈর্য্যই ধ্যান জানিবেন।“ (বেদবাণী ৩/ ২০)
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ on 17:33 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.