শ্রীশ্রীঠাকুর ভদ্রমহিলাগণকে সর্বদা "মা" বলিয়াই সম্বোধন করতেন এবং মায়ের মতই শ্রদ্ধা করতেন। প্রায় সকলকেই তিনি "আপনি" বলিয়াই সম্বোধন করতেন। তিনি কখনো কারো উপর রাগান্বিত হয়েছেন বা কেউ তাঁর বিরাগভাজন হয়েছেন এহেন ঘটনা বিরল।
কখনো কারো উপর রাগান্বিত হলেও তা তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য । কিন্তু পরে আবার সন্তানের ন্যায় স্নেহ করতেন। কথা বলার সময় তাঁর গলার সুমধুর স্বরটি সর্ব্বদা এক সুরেই বাঁধা থাকত। তিনি সর্বদা শান্তির কথা বলতেন। তিনি ধীর, স্থির, শান্ত ও ধৈর্য্য ধরণ ইত্যাদির উপদেশ দান করতেন এবং নিজেও সেগুলো ধারণ করেছেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন, ‘সর্বদা আনন্দে থাকবেন।’ ভক্তদের আনন্দের সুযোগ দিতে কখনো তিনি দ্বিধা করেন নি।
সাধারণ দৃষ্টিতে শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন অতি শান্ত। ভক্ত-গৃহে, উৎসব- সমারোহে ধীর, স্থির। নির্বিকারে সর্ব্বত্র চলাফেরা করতেন। সর্ব্বদা সংযত ভাব। বাহ্য জগৎ তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মত দৃষ্ট হলেও, ঠাকুর ছিলেন মহাসমুদ্রের তলদেশের ন্যায় শান্ত ও স্থির। ভক্ত ও দর্শনার্থীগণ স্বার্থ-পরার্থের কত প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করতেন। ঠাকুর ধৈর্য্য সহকারে প্রত্যেকটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে তাহাদের সংশয় ভঞ্জন করতেন। অমায়িক ব্যবহারে এবং স্নেহের সম্বোধনে উপস্থিত ভক্তগণের অন্তরে একটা পরম শান্তির প্রলেপ দিয়ে দিতেন।
ঠাকুর পরিবার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের আমৃত্যু সম্পর্ক ছিল। ঠাকুর কৈবল্য প্রাপ্তির পর হিমালয় থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নের জন্য আত্ম পরিচয় গোপন রেখে শ্রীশ্রীঠাকুর চাকুরীও করেছেন এবং প্রাপ্ত অর্থ বাড়ীতে প্রেরণ করতেন। পরিবারের সদস্যগণ ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দেখা করতেন। তাদের সঙ্গে ঠাকুর পারিবারিক প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা করতেন। অনেক সময় তাদের ভর্ৎসনাও করতেন। কিন্তু তাদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শনে কখনো কার্পণ্য করেননি। এমনকি দেহ রক্ষার পূর্ব্বেও শ্রীশ্রীঠাকুর ডিঙ্গামাণিকে সংবাদ প্রেরণের আদেশ করেছিলেন শেষবারের মতো তাঁকে দেখে যাওয়ার জন্য।
শ্রীশ্রীঠাকুর সর্বদা কর্ত্তৃত্ববুদ্ধি অহংকার, দাম্ভিকতা, ক্রোধ, পরনিন্দা ইত্যাদি পরিহার পূর্বক সহিষ্ণুতা, ধৈর্য্য, স্থিরতা ইত্যাদি ধারণের উপদেশ দিতেন এবং নিজেও ধারণ করতেন। কর্ত্তৃত্ববুদ্ধি, অহংকার, পরনিন্দা. দাম্ভিকতা, ক্রোধ, লোভ, হিংসা ও অন্যান্য সহগামী দোষসমূহ- তমোগুণ। তমোগুণ, দেহে আবদ্ধ জীবাত্মাকে পরমাত্মার সহিত মিলিত হতে দেয় না। অর্থাৎ তমোগুণ সম্পন্ন ব্যক্তি কৈবল্য-প্রাপ্তির অধিকারীগণ হন না। তাই ঠাকুর তমোগুণগুলি পরিত্যাগের উপদেশ দিতেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুরের লক্ষ লক্ষ ভক্ত। তিনি নিজে স্বয়ং সত্যনারায়ণ- অর্থাৎ তিনিই সকল কারণের মূল। তবু কষ্মিন কালেও তাঁর শ্রীমুখে "আমি একাই একশ, দুইজনের প্রয়োজন নাই।" “কৈবল্যধাম আমার ধাম” বা "শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ মন্দির আমার ধাম " এ হেন দাম্ভিকতা-পূর্ণ বাক্য প্রকাশ পায় নি। তিনি সর্ব্বদা দাম্ভিকতা, অহংকার, আত্মাভিমান, ক্রোধ, পরনিন্দা ইত্যাদি পরিত্যাগেরই উপদেশ দিতেন।
শ্রীশ্রী ঠাকুর শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম প্রতিষ্ঠার পর মাত্র একবার আশ্রমে গিয়েছেন। তিনি সর্ব্বদা বলতেন “আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ।“ অনন্ত শক্তির আধার ঠাকুর নিজেকে দরিদ্র ব্রাহ্মণ হিসাবে পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ বোধ করতেন। জয় রাম, জয় গোবিন্দ
নামময় হোক সকলের প্রাণ
শ্রীশ্রী ঠাকুর রাম চন্দ্রদেব ,আশ্রিত এবং অনাশ্রিত সাথে ঠাকুরের মধুময় আচরণ
Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL
on
08:25
Rating:
No comments: