..............

বাসনা বসে মন অবিরত, ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।

 বাসনা বসে মন অবিরত, ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।

কাজ কর রে মন সতীর মতন। মন সদা তুই কর উপপতি শ্রী মদন মোহনের মনন।। ঠিক করতো শ্রী রাধিকা যেমন। মন, তুই যদি করতে পারিস এমন কাজ তোর হবে না রে যেমন তেমন।।
নারদ বলেছেন “ব্যাসদেব, তুমি বিচক্ষণ ব্যক্তি। তুমি তো জান যতদিন বিষয়-বাসনা থাকবে, ততদিন ভগবানের দিকে মন যাবে না। তাই বলছি, তুমি মধুর গোবিন্দ-লীলা বর্ণনা কর। গোবিন্দ-লীলা শ্রুতি-সুখকর এবং হৃদয়ে আনন্দ এনে দেয়—একাধারে ভোগ ও মোক্ষ—প্রবৃত্তির আবরণে নিবৃত্তি।“
বশিষ্ঠদেব বলেছেন –“দৃশ্য পদার্থসমূহ, ভোগ্য বস্তুসমূহ, সবই মনোময়। মনে সৃষ্ট হয়ে সেগুলি মনেই অবস্থান করে। মন আবার পরম কারণ আত্মা হতে ভিন্ন নয়। ভেদময় দৃশ্যজগৎ সদা দোলায়মান ও সদা মননশীল মনের কল্পনা-মাত্র। সুতরাং ভেদ মনোকল্পনা এবং অসত্য। তাই মন অন্তর্হিত হলে, ভেদজ্ঞানের বিলুপ্তি হয়, তখন অক্ষয় পরমসত্তাই অবশিষ্ট থাকেন, অর্থাৎ মনোলয়ে ব্রহ্মা, জীব, মায়া, মন, কর্ম, কর্ত্তা, জগৎ ইত্যাদি ভেদ-ভিন্নতা অন্তর্হিত হয়, তখন আত্মা জ্ঞানস্বরূপ চিৎ-সাগরে নিমগ্ন হন। চিত্ত অস্থির এবং চিত্তকল্পিত জগৎও অস্থির, তাই চিত্ত ও জগৎ অসৎ।“
গৌতম বুদ্ধ বলেছেন “মন ধর্ম সমূহের পূর্বে গমন করে মন ধর্ম সমূহের অধিনায়ক এবং ধর্ম সমূহ মনে উৎপন্ন হয়।প্রসন্ন অন্তরে ভাষণ কিংবা কার্য করিলে সুখ উৎপন্ন হয়। তাহা দেহের ছায়া-তুল্য অপরিহার্য।“
শ্রীশ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য বলেছেন,”মন যে বিষয়ে ভাববৃত্তি অবলম্বন করবে অর্থাৎ যে বিষয়ে দৃঢ় হবে, মন সেই ভাবেই ভাবময় হবে। শূন্য-বৃত্তি হলে মনও শূন্য হয়ে যাবে, আবার ব্রহ্মবৃত্তিতে মন ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হবে। অতএব ব্রহ্ম-স্বরূপত্ব অভ্যাস করাই উচিত কার্য।“
শ্রীশ্রীত্রৈলঙ্গস্বামী বলেছেন, “অসন্তুষ্ট ব্যক্তি কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারে না । মননশূন্য মনে রিপুরা আশ্রয় নেয়। সংসার ধর্মাধর্মের পরীক্ষার স্থান - সাবধানে কাজ করবে। গর্বিত হবে না । যে ব্যক্তি শাস্ত্রের মর্ম জেনেও পালন করে না , সে পাপী হতেও অধম ।‘
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেন, -“মানুষের মন যেন সরষের পুঁটলি। সরষের পুঁটলি একবার ছড়িয়ে গেলে যেমন কুড়ানো ভার হয়ে ওঠে, মানুষের মনও সেই রকম একবার সংসারে ছড়িয়ে গেলে স্থির করা ভার হয়ে ওঠে। বালকের মন ছড়ায়নি, এজন্য সহজে স্থির হয়, কিন্তু বুড়োদের মন সংসারে ছড়িয়ে গেছে, এজন্য স্থির হওয়া ভার।“
শ্রীশ্রীত্রৈলঙ্গস্বামী বলেছেন,”কামনাকে জয় করতে না পারলে-পরমাত্মা লাভ করা যায় না। তাই আগে মনকে জয় করতে হবে।“
ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব যখন দক্ষিণেশ্বর থেকে চলে যান , তখন রামলদাদা ঠাকুরকে বলেছিলেন আপনি চলে যাচ্ছেন, আপনার জন্য বড় মন কেমন করবে ! ঠাকুর বললেন “তুই মনে করবি যে, আমি যেন কলকাতায় গেছি, কি ঝাওতলায় শৌচে গেছি । আবার আসব এই ভাববি , তাহলে মন কেমন করবে না ! " রামলালদাদা পরবর্তী কালে বলেছিলেনঃ, সেই অবধি মনে আর তেমন হয় না যে, ঠাকুর এখান থেকে চলে গেছেন । সর্বদাই মনে হয় তিনি রয়েছেন, তাঁকে দেখতে পাই । “
শ্রীশ্রীদেওরাহা বাবা বলেছেন”মন যখন (জ্ঞান অনুসরণ করে) যোগ শিক্ষায় পরিণত হয় তখন এঁকে বলা হয় ধর্ম-মেধা সমাধি।“
শ্রীশ্রীবামাক্ষ্যাপা বাবা বলেছেন” ব্রহ্মের উপাধি হলো মন। সুখ ও দুঃখ হলো ব্রহ্মের আবরণ।"
শ্রীশ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা বলতেন, "তোরা যে সংসার সমুদ্রে পড়ে ক্ষুধা তৃষ্ণায় কত অশান্তি ভোগ করছিস, সে ত তোদের মনের ধর্ম । শোক, মোহ, অবিদ্যাজনিত যত কর্ম তার মূলে আছে মন। এগুলি তোদের মনের ধর্ম ।
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, কামিনী কাঞ্চনে আসক্তি গেলেই, শুদ্ধ মন আর শুদ্ধ বুদ্ধি হয়। তখন শুদ্ধ মন শুদ্ধ বুদ্ধি এক।
শ্রীশ্রী সারদা দেবী বলেছেন “মনেতেই সব, মনেই শুদ্ধ, মনেই অশুদ্ধ। মানুষ নিজের মনটি আগে দোষী কোরে নিয়ে তবে পরের দোষ দেখ। পরের দোষ দেখলে অপরের কি হয়?- নিজেই ক্ষতি। যার শুদ্ধ মন সে সব শুদ্ধ দেখে।
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন,,”একমাত্র উপায় তাঁর শরণাগতি। মন, বুদ্ধি, অহংকার নিয়ে যে তার ব্যক্তিসত্তা তাঁর চরণে সমর্পণ করতে পারে। তাঁর কৃপায় মুহূর্তের মধ্যে তার দুঃখ নিবৃত্তি হবে। তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হয়। অপেক্ষা করতে হবে ধৈর্য্য ধরে।“
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন,”মন থেকে সব ত্যাগ না করলে ঈশ্বর লাভ হয় না।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,, “মানুষ যতপ্রকার জ্ঞানলাভ করিয়াছে, সবই মন হইতে। জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তোমার নিজ মনকে অধ্যয়ন করিবার উত্তেজক কারণ- উপলক্ষ মাত্র।“
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, কামিনী কাঞ্চনে আসক্তি গেলেই, শুদ্ধ মন আর শুদ্ধ বুদ্ধি হয়। তখন শুদ্ধ মন শুদ্ধ বুদ্ধি এক।
স্বামী ব্রহ্মানন্দ বলেছেন, 'আসল আনন্দ পেতে হলে সংসারসুখে- জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষণিক আনন্দের মায়া ত্যাগ করে তাতে ষোলো-আনা মন দিতে হবে। তার দিকে মন যত বেশি যাবে আনন্দ তত বেশি হবে। আর সংসারের দিকে, ভোগের মন যত বেশি যাবে, ততই দুঃখ - কষ্ট বেশী হবে।
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন,, আগে চিত্ত শুদ্ধ কর; মন শুদ্ধ হলে ভগবান পবিত্র আসনে এসে বসবেন।
শ্রীশ্রী সারদা দেবী বলেছেন ,”যখনই মনে কোন কু-ভাব আসবে, মনকে বলবে-তাঁর ছেলে হয়ে আমি কি এ কাজ করতে পারি? দেখবে- মনে বল পাবে, শান্তি পাবে।“
শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন,,”মন স্থির হলে বায়ু স্থির হয়-কুম্ভক হয়। এই কুম্ভক ভক্তিযোগেতেও হয়। ভক্তিতে বায়ু স্থির হয়ে যায়।“
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,, “মন যখন জীবনের উচ্চতম তত্ত্বগুলি সম্বন্ধে চিন্তা করিতে অসমর্থ হয়, তখন ইহা মস্তিুস্কের দুর্বলতার নিশ্চিত লক্ষণ বলিয়া জানিতে হইবে।“
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন,, “কাম, ক্রোধ সব রিপু অবচেতন মনের স্তরে স্তরে সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা প্রকাশ হয়। কারণ মানুষ তাদের অস্তিত্ব সম্বদ্ধে সচেতন নয়। অচেতন মন রিপুদের অবাধ ক্রীড়াক্ষেত্র।“
শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন, “ভক্তের বোঝা আমি নিজে কাঁধে বয়ে বেড়াই তোদের সব দায়িত্ব আমার। কেবল তোদের সহজ সরল মনটুকু আমায় দে। আমি যে তোদের প্রেমের কাঙ্গাল।“
শ্রীশ্রী আনন্দময়ী মা বলেছেন, "যে যত আত্মহারা হয়ে একনিষ্ঠার সহিত প্রণাম করিতে পারে, সে তত শক্তি পায় ও আনন্দ লাভ করে। আর যদি কিছু না পারিস্ সকালে বিকালে দেহ-মন-প্রাণ ঢালিয়া দিয়া একটি কাতর প্রণাম দিবি।"
শ্রীশ্রী আনন্দময়ী মা বলেছেন , “নিরন্তর জপ করতে হবে। যতটা ইস্টতে মন রাখবে ততটা নিষ্ঠা বাড়বে। বহুদিকে মন না দিয়ে একাগ্র হওয়া। ভয় ভাবনা কেন? তিনি আমার কাছে নাই-এই ভাবটার জন্যই তো। তিনি আছেন। খুব কাছেই। তিনি ধরে আছেন ভয় কি?”
শ্রীশ্রীমৎ নিগমানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন , “হরগৌরী, রাধাকৃষ্ণ, সূর্য, গণেশ, আল্লা, গড্, ঈশা, মুশা, শ্রীচৈতন্য প্রভৃতি যে-কোনো "নাম-রূপ" অবলম্বন কর না কেন, উহা একমাত্র ভগবানকেই লক্ষ্য করিতেছে। সুতরাং কোনো সাধকই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। কিন্তু ভগবানকে ভুলিয়া, ইহকাল সর্বস্ব ভাবিয়া বিষয়-সেবায় মন-প্রাণ সমর্পণ করাই প্রকৃত লক্ষ্যভ্রষ্ট।“
শ্রীশ্রী দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেবকে একজন প্রশ্ন করেন, “সাধুবাবা আমরা সাধুর কাছে কি চাইব?" তিনি বললেন-“চিত্তশুদ্ধি হোক, মন বুদ্ধি ভাল হোক অর্থাৎ সরল হোক।”
শ্রীশ্রী ভোলানন্দ গিরি মহারাজ বলেছেন , “সাধু-সঙ্গ প্রত্যহই কর্ত্তব্য। চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে, সাধু-সঙ্গও পার্থিব বিষয় হইতে মনকে উঠাইয়া আনে। “
শ্রীশ্রী দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব বলেছেন “মনে রাখিও কয়েকদিনের জন্য জগতে আসিয়াছ।তবে যাবৎ হিংসা,দ্বেষ কেন।মন ভাল কর, শান্তি সুখ এখনই লাভ হইবে ।“
শ্রীশ্রী ভোলানন্দ গিরি মহারাজ বলেছেন,”মনকে স্থির করিতে চেষ্টা করিতে গেলেও বহির্জগৎ অন্তঃকরণে পুনঃ পুনঃ প্রকাশ পাইয়া বিঘ্ন জন্মায়। মন মহারাজ বেড়াইতে গেলেন, আর তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে কত ভদ্রলোক তাঁহার বাড়ীতে আসিল।“
মহাযোগী শ্রীশ্রীমৎ স্বামী দয়ানন্দ অবধূত “আমি ভাল হব” যাহার সতত এই চিন্তা থাকে, সে নিশ্চয়ই কৃতকার্য্যতা লাভ করিতে পারে।সর্ব্বদা সত্য কথা বলা দরকার। শুধু সত্যবাক্য প্রয়োগ করিলেই সত্যবাদী হওয়া যায় না। মন ও মুখ এক করিতে হইবে নতুবা সবই বৃথা। মুখে মত্য বলিয়া, মনে মিথ্যা কল্পনা করিলে সে কপট সত্যবাক্যেও কোনই কার্য্যকরী ক্ষমতা থাকে না। মন ও মুখ এক করার নাম সাধন।“
শ্রীশ্রীস্বামী অমলানন্দ অবধূত “শুচি অশুচি মানসিক বিকার মাত্র। মন যার পবিত্র সেই প্রকৃত শুচি। বাহ্যিক পবিত্রতা রক্ষা করিয়াও মন যার অপবিত্র সেই প্রকৃত অশুচি।“
শ্রীশ্রী অরুণাময়ী মা “মনকে যত বেশী ছড়িয়ে দেওয়া যায় ততই আনন্দ পাওয়া যায়। ছোট মন দিয়ে বেশী কিছু উপলব্ধি করা কিংবা জানা যায় না।“
ভগবান শ্রী রমেন মহর্ষি বলেছেন, “যেখানেই ঘুরুক মনকে একাগ্র ক'রে একটা বিষয়ে লাগিয়ে রাখা ভাল। শরীরটাকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে মনকে ঘুরে বেড়াতে দিয়ে কী লাভ?”
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন –“ঐ যে ভালো লাগে না, মন স্থির হয় না, এটাও একটা অবস্থা। এই সময়টা একটু ধৈর্য দরকার। নাম করবেন,নামকে ধইরা থাকতে হয়। ভালো লাগুক, মন্দ লাগুক,নামকে ছাড়বেন না। ভালো লাগা, মন্দ লাগা মনের ব্যাপার। মনের সেবা করতে যাইবেন না।মনের সঙ্গে যুদ্ধ করারও দরকার নাই,মনের সঙ্গে সায় দিয়া চলারও দরকার নাই। ঐ দিকটা লক্ষ্যই করবেন না।“
শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ বলেছেন “মনকে এই জগৎ হইতে সরাইয়া যতই অন্তর্জগতের দিকে নিতে পারিবে ততই মন স্থির হইবে ও বিবেক বৈরাগ্য লাভ হইতে থাকিবে ।“
শ্রীশ্রী স্বামী পূর্ণানন্দ পরমহংসদেব বলেছেন, “বাহ্য-যোগে ধরবেরে ঐশ্বর্য্য রোগে, পুনঃ আনবে কর্ম্ম ভোগে, থাক তাঁর যোগে, মন তাঁরে দেখে।“
স্বামী পরমানন্দ মহারাজ বলেছেন “মানব মননশীল। মানবের মনে অনেক কামনা-বাসনা বিদ্যমান। মনের এই নিম্নমুখী বেগকে অশুদ্ধ মন বলা হয় এবং কামনা-বাসনা বিমুক্ত মনের ঊর্ধ্ব বেগকে বিশুদ্ধ মন বলা হয়। মনই হল বন্ধন এবং মুক্তির কারণ। অনিত্য বিষয় বাসনা বিজড়িত মনই বন্ধন কারক। অনিত্য বিষয় বাসনা বিমুক্ত মন বা নিত্যমুখী মনই মুক্তি প্রদায়ক। এই অনিত্য বিষয় আসক্ত মনকে বিষয় বিমুক্ত করবার নিমিত্তই উপাসনা বা আরাধনা মানব জীবনে একান্ত প্রয়োজন। সমস্ত রকমের উপাসনার উদ্দেশ্যই হল মনকে বিশুদ্ধ বা নির্মল করা।“
ছাড় মন কুজন সঙ্গ রঙ্গ।
দিবা নিশি ভাবে বসি, কর শ্রীপদ প্রসঙ্গ। শ্রীশ্রীমৎ মহর্ষি মনোমোহন।
আনন্দ করুন। আনন্দে থাকুন। আনন্দই মানবের স্বরূপ।

বাসনা বসে মন অবিরত, ধায় দশ দিশে পাগলের মতো। বাসনা বসে মন অবিরত,  ধায় দশ দিশে পাগলের মতো। Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 14:41 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.