নিজ নিজ অধিকারের দাবী না করিয়া কর্ত্তব্য বিষয়ে সচেতন থাকিবার চেষ্টা করিবেন। ভাগ্যং ফলতি সর্ব্বত্র। সত্য যাকে শ্রীবলে, মনের চঞ্চলতা দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া সত্য বিয়োগ হইয়া প্রকৃতির তারতম্যভাবে পতিত হয় এবং প্রকৃতি গুণের দ্বারা হ্রস্ব দীর্ঘভাবে জীবসকলকে পরিচালিত করিয়া থাকে, তাহাতে জগৎ বিপরীত হয়।
এই দোষ কাহারো নাই। স্ব স্ব ভাগ্যানুসারেই হইয়া থাকে।সীমাবদ্ধজ্ঞানকে "মন" বলে এবং "বোধ" বলে জানিবেন। স্বীয় ভাগ্য হইতে সন্তোষ না হইতে পারিয়া পরের ভাগ, যাহা আপন নয়, তাহা পাইতে গেলে, কি ইচ্ছা করিলেই ঋণপাশে আবদ্ধ হইয়া জন্ম, মৃত্যু, জরা ব্যাধিতে বন্ধন হইয়া দু:খ (দুস্তর) পাইয়া অনুতাপে তাপিত হয়। এই অবস্থাকে যমদণ্ড, কালদণ্ড বলে। মা শব্দটি স্বভাব, পিতা শব্দটি ধর্ম্ম, ধরা ধার্য্য করা [?] আমি কে?, আমার কর্ত্তব্য কি, আমার তাপের কারণ কি? এই অনুসন্ধানের দ্বারা পিতৃলোক সত্য, মাতৃলোক ধৈর্য্য সহিষ্ণুতাকে লাভ করিয়া সকল বন্ধন অর্থাৎ সকল ঋণদায় হইতে মুক্ত হইয়া সত্যকে পাইতে পারে। ইহাই সত্যের সেবা, মনের দ্বারা কেবল পাশবদ্ধই হয়, ত্রাণ পাইতে পারে না। যেমন গাঢ় ঘুমের ঘোরে মন, বুদ্ধি, দেহ, গেহ, জাতি মান, অহংকারাদি কেহই থাকে না, তখন যেই অবস্থা সেইটি সত্যের সেবা করিয়া পায়। অতএব মনের দ্বারা, কি বুদ্ধির দ্বারা, কি বিদ্যা জ্ঞানাদির দ্বারা সত্য পায় না, কারণ মনের, বুদ্ধির ভালমন্দরুপ অংশ আছে কিন্তু সত্যের অংশ নাই। জীবগণ যাহা চায় তাহা মনের কামনা জানিবেন। সত্যের সেবায় সকলি পায়, মনের সেবায় সকলি হারায়। ভাগ্যের বেশী কিছু মনে দিতে পারে না। স্ব স্ব ভাগ্যেই ভোগ হইয়া থাকে।
.
প্রকৃতের্গুণ সংমূঢ়া: সজ্জন্তে গুণ কর্ম্মসু।
তানকৃৎস্নবিদো মন্দান কৃৎস্ন বিন্ন বিচালয়েৎ।।
"জোযয়েৎ সর্ব্বকর্ম্মাণি মুক্তসঙ্গ সমাচরেৎ"
.
অর্থাৎ মনের সুখ দু:খের অধীন হইতে আলগ [?] থাকিতে অভ্যাস করিতে করিতে সত্যলোকে বসতি হইবে। ...সত্যের আশ্রয়কে অয়ন বলে, এই অবস্থাকেই সত্যনারায়ণ বলিয়া থাকে। অতএব অন্যের ভাগ্যের প্রতি লুব্ধ না হইয়া স্বীয় ভাগ্যের মানে সন্তোষ থাকিতে অভ্যাস করুন, তিনিই সকল কণ্টক হইতে উদ্ধার করিয়া নিবেন।
-শ্রীশ্রী রামঠাকুর
বেদবানী ৩য় খন্ড(১৬১)
No comments: