..............

রাম ঠাকুর এর কথা

ভোগ শেষ হয়ে গেছে।বিকেল চারটে হবে।এক পঙক্তি খেতে বসবেন,পাতা আসন পড়েছে অনেকেই বসে পড়েছেন।তিলক কাটা গলায় তুলসীর মালা,একটা অপরিচিত লোক এসে দাঁড়ালো প্রসাদের জন্য।পোশাক পরিচ্ছেদ দেখে মনে হয় বাড়িতে বাড়িতে খঞ্জনি বাজিয়েই রোজগার করে।এই বৈষ্ণবটি একটা আসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই বসে আছে-সে আর বসে না।উনি (ঁকুঞ্জবাবু) সেই বৈষ্ণবটি দাঁড়িয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, সে বসছে না কেন।বৈষ্ণবটি বললো, "পাতায় যে পা পড়েছে, এতে কী করে ঠাকুরের প্রসাদ নেবে?"

বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করে যার চলে তার আবার অত শুচিবাই! উনি (ঁকুঞ্জলাল মজুমদার) একটু বিরক্তির সঙ্গেই বললেন, "এখন ত আর পাতা পাল্টানো যায় না। প্রসাদ চান তো বসে পড়ুন।"

বৈষ্ণবটি বেঁকে বসলো। না–তাহলে আর প্রসাদ পাওয়া হলো না।বৈষ্ণবের গোঁ দেখে কেউ আর তাকে সাধলো না।বৈষ্ণবকে জব্দ করা যাক।

প্রসাদের উপর ওর খুব নিষ্ঠা,তাই যখন,তখন ত কণামাত্র হলেই সে সন্তুষ্ট হবে।উনি (ঁকুঞ্জবাবু)  বৈষ্ণবকে জিজ্ঞেস করলেন,  "আপনি তাহলে হাতে করে একটু প্রসাদ নিন।"
বৈষ্ণব বললেন, কি কি হয়েছে বলুন।উনিও (ঁকুঞ্জবাবুও) খুব বিরক্তবোধ করছেন লোকটার মুরব্বিয়ানা দেখে।এতগুলো ভদ্রলোক তারা বসে খেতে লাগলো আর এ বেটা ত বসলো না।তার উপর তার কাছে আবার রান্নার লিষ্টি দিতে হচ্ছে,তারপর তিনি বলবেন তিনি কি খাবেন।

কর্ত্তা (ঁকুঞ্জবাবু)  খিচুড়ি, পোলাও, ভাত ইত্যাদি করে শুরু করলেন-এবার বোধ হয় বৈষ্ণব ঠাকুরের খোলস খুলবে,বলবে হয়ত-"আচ্ছা দিন বসি"।বৈষ্ণব খাওয়ার লিষ্ট শুনে বললো,  "আচ্ছা,শুধু ধোকার তরকারি একটু দিন।"

কর্ত্তা (ঁকুঞ্জবাবু)  ভাঁড়ার ঘরে এসে খোঁজ করলেন,একমাত্র ধোকার তরকারীটাই শুধু নেই।আর সবই আছে।উনি (ঁকুঞ্জবাবু)  ফিরে এসে বৈষ্ণবকে বললেন, ওটা ত' নেই,আর যেটা ইচ্ছে বলুন।বৈষ্ণব বললো, আর কিছুই আমার চাই না,আমি ত' খাব বলেই এসেছিলাম।আপনি ত' দিলেন না।"

বৈষ্ণবের কথা তার (ঁকুঞ্জবাবুর) কানে গেল বটে,কিন্তু উনি (ঁকুঞ্জবাবু)  কোন উত্তর দিলেন না।অন্যান্য অনেকেই তখন বসে খাচ্ছে, উনি ঘুরে পরিবেশনের তদারক করে এলেন।দু'একজনের সাথে দু'একটা কথা বলেও এলেন।দু'মিনিট কি তিন মিনিট। একটু পরে খেয়াল হলো-ভিখিরী হোক,আর যাই হোক,লোকটা প্রসাদ পেলো না,তার সঙ্গে আচরণও ঠিক হয় নি।

উনি (ঁকুঞ্জবাবু) ফিরে এলেন, কিন্তু বৈষ্ণব ঠাকুর কই? গলি দিয়ে বেড়িয়ে রাস্তা পর্যন্ত গেলেন।রাস্তায় অনেকটাই দেখা যাচ্ছে-লোকজন তখন রাস্তায় দু'একজন,কিন্তু বৈষ্ণব ঠাকুরকে ত' আর দেখা যাচ্ছে না।এই দু'তিন মিনিটের মধ্যে লোকটা গেল কোথায়! এত তাড়াতাড়ি যে আর এতটা পথ যাওয়া সম্ভব নয়। বৈষ্ণব ঠাকুরকে আর পাওয়া গেল না।

ঠাকুর বলতেন, "কর্ত্তৃত্ব করে শুধু দক্ষযজ্ঞই হয়,যজ্ঞ শেষ হয় না।"  খাওয়া-দাওয়া জোগাড় করে নিজেরাই ভাবলাম,খুব জোগাড় করেছি।নিজের কৃতিত্বে নিজেরাই বেশ গর্ব্ববোধ করলাম।নিবেদিত সামগ্রী যদি তিনি গ্রহণ করতেন,তাহলে তো প্রসাদ হতো।বৈষ্ণব ঠাকুরও গ্রহণ করতেন।কিন্তু এ তো আর প্রসাদ হয় নি,দেবতা গ্রহণ করেন নি।ঠাকুর একদিন অন্যান্য কথা বলতে বলতে বললেন, "বিলাতে,আমেরিকায় অনেক ধনী ক্রোড়পতি আছে,সত্য তাদের কাছে যায় না।গরীবের সামান্য একটুখানি দ্রব্যও যদি মনে প্রাণে ভক্তি করে নিবেদন করে, গ্রহণ করে।"

   জয় রাম জয় গোবিন্দ
   ঘরের ঠাকুর শ্রী রামচন্দ্র
—শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার

রাম ঠাকুর এর কথা রাম ঠাকুর এর কথা Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 20:58 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.