..............

রামঠাকুর


ঠাকুর কর্তৃক "বাঞ্ছা –কল্পতরু" নামের সার্থকতা  প্রদর্শন  :–
একবার বর্ষাকালে শ্রীকান্তবাবুর পুত্র শ্রী দীনেশচরণ বসু রায় চৌধুরী শ্রী শ্রী  ঠাকুরকে সঙ্গে করিয়া স্টীমার যোগে রাজবাড়ী (বহর)  স্টেশনে অবতরণ করিলেন। স্টীমার ঘাটের নিকট পদ্মা নদীতে জেলেরা সেদিন বড় ভীড় জমাইয়া ইলিশ মৎস্য ধরিতে ছিল। প্রতি খ্যায়ে খুব বড় বড় পাঁচ সাতটি করিয়া ইলিশ মৎস্য ধরা পড়াতে জেলেরা সানন্দে প্রতিবারেই কোলাহল করিয়া নদীতীর তোলপাড় করিয়া তুলিতেছিল এবং "বড় বড় মাছ" বলিয়া চিৎকার শুনিয়া তীরস্থ সকলেই আনন্দধ্বনিতে সে স্থান তোলপাড় করিয়া তুলিতে লাগিল এবং তীরস্থ লোকজন অবাক হইয়া জেলেদিগের জালের দিকে তাকাইয়া দেখিতেছিল। সত্যি এতবড় বৃহৎ ইলিশ মৎস্য কদাচিৎ দেখা যায়। শ্রীদীনেশবাবু স্টীমার ঘাট হইতে ঠাকুরসহ তীর ধরিয়া চাঁচড়তলা   ৺কালীবাড়ী অভিমুখের সড়ক ধরিয়া নিজ বাড়ী বাহেরক অভিমুখে গমন করিতেছিলেন। আর ঐরূপ বৃহৎ বৃহৎ মৎস্য দেখিয়া তাঁহার লোভ জন্মিতে ছিল যে উহার কয়েকটি খরিদ করিয়া লন। কিন্তু ঠাকুর সঙ্গে থাকায় খরিদ করিতে সাহস পাইতেছিলেন না। জেলেদিগের চিৎকার শুনিয়া দীনেশবাবুও প্রতিবারে তাকাইয়া তাকাইয়া দেখিতেছিলেন এবং বলিতেছিলেন এরকম মাছ  "মাছভাতে" প্রস্তুত করিয়া খাইতে খুব উপাদেয়। শ্রীশ্রীঠাকুরও মাছ দেখিয়া আনন্দ সহকারে দুই –এক বার বলিয়া ছিলেন, "এই রকম মাছই 'মাছভাতে' তৈরী করিয়া খাইতে খুবই ভাল। "  হাঁটিতে হাঁটিতে দীনেশবাবু ভাবিতেছিলেন, তবে কি সত্যি ঠাকুরের এইরূপ  মৎস্য দ্বারা "মাছভাতে" তৈরী করিয়া খাওয়ার ইচ্ছা হইয়াছে?  যাহা হউক, ভাবিয়া চিন্তিয়া তিন চারটি বড় বড়  মাছ জেলেদিগের নৌকা হইতে খরিদ করিয়া হাতে লইয়া নিজ গৃহাভিমুখে চলিতেছিলেন। পথিমধ্যে শ্রীসীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ী –সীতানাথবাবু দীনেশবাবুর বাল্যবন্ধু   এবং তাঁহাদের উভয়ের বাড়ীই পাশাপাশি। সীতানাথবাবুর কনিষ্ঠা ভগিনী শ্রীযুক্তা শৈবালিনী দেবীও দীনেশবাবুকে 'দাদা' বলিয়া ডাকেন এবং আপন ভাইয়ের মতন মনে করিয়া থাকেন। ঠাকুর যখনই দীনেশবাবুর বাড়ী আসেন, তখনই শৈবালিনী দেবী উপস্থিত থাকিয়া নিজ হস্তে ঠাকুরের ভোগের জন্য লুচি,তরকারী,ভাজি ইত্যাদি প্রস্তুত করিয়া ঠাকুর ভোগের ব্যবস্থা পৃথকভাবে করিয়া দিয়া থাকেন।
সীতানাথবাবুর বাড়ীর পাশ দিয়া আসার সময় দীনেশবাবু "শৈবালিনী! শৈবালিনী। " বলিয়া ডাকিলে যখন তিনি সাড়া দিলেন,তখন তিনি বলিলেন, "ঠাকুর আসিয়াছেন, তুমি আমাদের বাড়ীতে আস। "ঠাকুরের আসার সংবাদ শুনিয়া তিনি সাহ্লাদে দ্রুত পাশ্ববর্তী লাগা বাড়ীতে চলিয়া আসিয়া ঠাকুরকে প্রনাম করিলেন।
কিঞ্চিৎ পরে শৈবালিনী দেবীকে নিভৃতে ডাকিয়া দীনেশবাবু বলিলেন, "দেখ বোন! ঠাকুর ভোগ তো বরাবরই তুমি পাক করিয়া ভোগের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া থাক। কিন্তু আজ তোমাকে একটু অন্যরকমও করিতে হইবে। " তখন শৈবালিনী দেবী বলিলেন, "কি দাদা! বলুন! "তখন দীনেশবাবু বলিলেন, "দেখ, এত বড় ইলিশ মাছ বড় দেখা যায় না –আজ জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঐ মাছ ধরিতেছে এবং এই দিয়া 'মাছভাতে ' তৈরী করিয়া খাইতে খুব ভাল। আমরা সকলেও বলিয়াছি দেখিয়া ঠাকুরও দুই একবার বলিয়াছেন "হাঁ,এই মাছ দিয়া 'মাছেভাতে' তৈরী করিয়া খাইতে খুব ভাল। " কি জানি যদি ঠাকুরের সত্যি খাওয়ার ইচ্ছা থাকে। তাই তুমি বরাবরকার মত ভোগ রচনা তো করিবেই, কিন্তু তাহার পাশ্বে‘ আর একখানা দৃষ্টিভোগস্বরূপ –ভাত, মাছভাতে, মাছভাজা,মাছের ঝোল পাক করিয়া সাজাইয়া রাখিয়া দিবে। পারিবে তো?"  শৈবালিনী দেবী মহানন্দে নিজ হাতে পাক করিয়া ঐরূপভাবে দুইখানা আলাদা আলাদা ভোগ সাজাইয়া রাখিয়া দিলেন। যথাসময়ে ঠাকুর ভোগ গ্ৰহণ করিতে আসিয়া আসনে বসিয়া নিবেদনান্তে নিত্যনৈমিত্তিক ভোগ গ্ৰহন করিয়া মৃদু মৃদু হাসিতে হাসিতে ঐ দৃষ্টিভোগের সামনে যাইয়া দাঁড়াইলেন এবং ঐ মাছভাত হইতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ  ও তর্জনী সাহায্যে চিমটি কাটিয়া এক চিমটি 'মাছেভাতে ' তুলিলেন এবং ভোগের অন্ন হইতেও ঐরূপ চিমটি কাটিয়া এক চিমটি অন্ন গ্ৰহণ করিয়া ঐ দুই অঙ্গুলি দ্বারাই উহা রগড়াইয়া জিহ্বাগ্ৰে দিয়া স্বাদ গ্রহণপূর্বক বলিলেন,"সত্যি মাছটা বড়ই সুস্বাদু! " বিদুরের গৃহে শ্রীকৃষ্ণের ক্ষুদান্ন গ্ৰহনের মতই ঠাকুর তাঁহার একনিষ্ঠ ভক্ত শ্রীদীনেশচরণ বসুরায় চৌধুরীর বাসনা পূর্ণ করিয়া অপার আনন্দে ভাসমান করিলেন।
জয় রামজয় রাম জয় রাম 
শ্রী কুঞ্জবিহারী ঘোষ মহাশয়ের:—
"শ্রীরামঠাকুর চরিত" হইতে সংগৃহীত।
MY AMAZON PAGE, PLS VISIT MY SITE JOYRAM


রামঠাকুর রামঠাকুর Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 19:54 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.