..............

Thakurar kotha

-ঃস্বর্গীয় অবনীমোহন মুখুটীঃ-

ত্রিরিশ দশকের শেষার্ধের ঘটনা। ঈশ্বর গাঙ্গুলী স্ট্রীটের একটি বাড়ির ত্রিতল ভাড়া নিয়ে তখন সেখানে সপরিবারে বাস করতেন স্বর্গীয় অবনীমোহন মুখুটী।ঠাকুরমহাশয় কয়েকদিন ধরে ঐ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে অবনীমোহন ছিলেন ব্যবহারজীবী।মুহুরী,মক্কেল নিয়ে ঐ বাড়ির একতলার একখানা ঘরে তিনি সকাল-সন্ধ্যায় বসতেন।

সেদিন একটা জরুরী মামলা ছিল অবনীমোহনের।সে কারণেই আগের দিন বহুলোকের সমাগমে তার বৈঠকখানা সন্ধ্যার পর থেকেই ভর্তি। অতি ব্যস্ততার মধ্যে তিনি কখনও বা আইনের বই ঘাঁটছেন,কখনও মক্কেল বা জুনিয়র উকিলের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

এমন সময় অবনীমোহনের বৈঠকখানা ঘরের দরজার সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ান।ঠাকুরমহাশয়ের জনৈক আশ্রিত গাড়ি থেকে নেমে অবনীমোহনের সামনে এসে উপস্থিত হলেন।তাকে দেখামাত্র অবনীমোহন সসম্ভ্রমে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন,  "ঠাকুরমহাশয় উপরেই আছেন।দাদা,আপনি সোজা উপরে চলে যান।" আগন্তক ভদ্রলোক ইতিপূর্বে অনেকবারই ঠাকুর দর্শনে এ বাড়িতে এসেছেন, সুতরাং পথ তার অজানা নয়। প্রভাবশালী লোক ছিলেন তিনি, কাজেই আশা করছিলেন গৃহস্বামী তাকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরমহাশয়ের কাছে যাবেন।। অতি ব্যস্ত থাকায় অবনীমোহন বৈঠকখানা ছেড়ে যেতে পারছিলেন না।আগন্তক অগ্রণী হয়ে উপস্থিত সকলকে বললেন , তিনি পাঁচ মিনিটের জন্য তার ভাইটিকে ভিক্ষা করে নিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় নেমে তিনি অবনীমোহনের কাঁধে হাত রেখে বললেন,  আমরা তো আইনের কিছু জানি না, বুঝিও না,তাই বড় উকিলের কাছে যেতে হলে আমরা মুহুরীকে সঙ্গে না  নিয়ে তো এগোতে পারি না। বলেই ভদ্রলোক নিজের রসিকতায় নিজেই ফেটে পড়লেন।

সিঁড়ি বেয়ে তারা দু'জনেই ধীরে ধীরে তিনতলায় উঠলেন। ঠাকুরমহাশয় যে ঘরে বসেছিলেন সেই নাতি প্রশস্ত ঘরখানিতে বহু নর-নারীর সমাবেশ তখন আর তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অবনীমোহন ঠাকুরমহাশয়কে ভদ্রলোকের আগমন বার্তা জানালেন। একটু বিরক্তিভরা কন্ঠে ঠাকুরমহাশয় জানতে চাইলেন কেন অবনীবাবু এ সময়ে আবার ওপরে উঠে এলেন।আগামীকাল না তার একটি জরুরী মামলা আছে।অবনীমোহন জানালেন, তিনি এখনই নীচে চলে যাচ্ছেন। কেবল দাদাকে পৌঁছে দেবার জন্য তিনি এ সময়ে উপরে উঠে এসেছেন। ঠাকুরমহাশয় পুনরায় বললেন, ওনার তো এ পথ অজানা নয়, তবে আপনাকে নিয়ে আবার টানাটানি কেন? সারা ঘরখানিতে একটা অস্বাভাবিক স্তব্ধতা বিরাজ করছিল ঠাকুরমহাশয়ের বিরক্তি-ভরা কন্ঠস্বর শুনে।একটু পরে তাঁহার মুখ থেকে নিঃসৃত হল, "সেই রকম উকিল হইলে কোনও মুহুরীর ক্ষমতা নাই উকিলবাবুর কাছে যাকে তাকে নিয়ে আসে।"

এই শুনে অবনীবাবু অবাক,অতিমাত্রায় আত্মসচেতন আগন্তক ভদ্রলোকও হতবাক। রাস্তায় নেমে যে কথা তিনি অবনীবাবুকে বলেছিলেন সে কথা তিনতলার এই প্রকোষ্ঠে বসে ঠাকুরমহাশয়ের শোনা তো কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়। অথচ কী প্রকারে ঠাকুরমহাশয় তা' জানতে পারলেন এবং হুবহু উচ্চারণ করলেন।ভদ্রলোক উপস্থিত ঠাকুর দর্শনার্থীদের নিকট সুপরিচিত। সুতরাং তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার ঠাকুরমহাশয়ের কাছে যাওয়ার জন্য অত ভিড়ের মধ্যেও পথ অতি সহজেই হয়ে গেল।ভদ্রলোকও বুঝতে পারলেন পরিহাসটা পরিতাপেরই কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।কাল বিলম্ব না করে কম্পমান দেহে তিনি ঠাকুরমহাশয়ের চরণ স্পর্শ করলেন।তার মস্তকে দক্ষিণ হস্ত রেখে ঠাকুরমহাশয় বললেন,  ''সহজ হোন,সরলতাই বল।দম্ভ অতি দোষের,ওটা আসুরিক প্রবৃত্তিমাত্র,ওকে প্রশ্রয় দিলে দুর্বিপাকে পড়তে হয়।''

জয় রাম জয় গোবিন্দ

Thakurar kotha Thakurar kotha Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 09:40 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.