..............

RAMTHAKUR AR KOTHA

চিত্তবাবু সাত তাড়িতাড়ি করে একটি ধূতি ও একটি শার্ট খবরের কাগজে মুড়ে বেরিয়ে পড়লেন।রাতে এসে পৌঁছুলেন তার দাদার মক্কেলের বাড়ি।সেখানেই রাত্রিবাস করবেন স্থির হলো এবং ঐ মক্কেলের কাছে এও জানতে পারলেন যে,ঠাকুরমহাশয় ফেণীতেই আছেন।তিনি নিজে সন্ধ্যার পরে ঠাকুর দর্শন করেই বাড়ি ফিরেছেন।

ভোরের আলো তখনও ফুটে ওঠেনি।চিত্তবাবু তাড়াতাড়ি পুকুরে স্নান করে ধোওয়া জামা কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে নিলেন।ঠাকুরমহাশয় তখন ছিলেন ফেণী কলেজের অধ্যাপক প্রমথনাথ চক্রবর্ত্তী মহাশয়ের বাসগৃহে।চিত্তবাবুর দ্রুতপদে অগ্রসর হতে লাগলেন সেই বাড়ির দিকে দুরু-দুরু বক্ষে,এই ভেবে ঠাকুরমহাশয় যদি তাকে "নাম" না দেন! তিনি শুনেছেন ঠাকুরমহাশয় যাদের "নাম" দেন,বিনিময়ে এক কপর্দকও তিনি গ্রহণ করেন না কারও কাছ থেকে।সুতরাং উপস্থিত হলেই যে "নাম" পাবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়?

ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চিত্তবাবু প্রবেশ করলেন প্রমথবাবুর বাড়িতে।কাহাকেও দেখতে পাচ্ছেন না।ঠাকুরমহাশয় এ বাড়িতে আছেন কি নেই তাও বুঝতে পারছেন না।দুয়ারে দুয়ারে চোখ তিনি ঘোরাচ্ছেন,হঠাৎ নজরে পড়ল একটা ঘরের দরজায় সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা দুটো লাইন-- "ঠাকুরমহাশয় অসুস্থ,বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ"। উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন চিত্তবাবু, তবে তো ঠাকুরমহাশয় এই ঘরেই আছেন। আর কাল বিলম্ব না করে ঘরের মধ্যে তিনি ঢুকলেন,দেখলেন একখানা তক্তপোষের উপর বিছানায় শায়িত একজন কিন্তু আপাদমস্তক তাঁর একখানা সাদা সস্তা দামের চাদরে আবৃত।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শায়িত পুরুষটিকে দেখবার চেষ্টা করলেন।তারপর তাড়াতাড়ি চরণের দিকের চাদরটি একটু সরিয়ে প্রণাম করলেন।ভুলে গিয়েছিলেন তিনি যে শয়ান অবস্থায় কাহাকেও প্রণাম করা অনুচিত।ঠাকুরমহাশয় উঠে বসলেন বিছানার উপর সটান হয়ে।চিত্তবাবু ভয় পেলেন যে অসুস্থ অবস্থায় ঠাকুরকে তুলে হয়ত তাঁহার কোপানলে তিনি পড়বেন।ভয়ে তিনি কেঁদে ফেললেন।অভয় দিয়ে ঠাকুরমহাশয় সস্নেহ কন্ঠে বললেন, " কানদেন ক্যান,আপনি কী চান?" চোখের জল মুছে চিত্তবাবু "নাম" প্রার্থনা করলেন--হাঁটু গেড়ে বসে করজোড়ে।ঠাকুরমহাশয় বললেন, ওভাবে বসলে তার কষ্ট বেশি হবে,যেভাবে তিনি সব সময় বসেন সেইভাবেই বসুন এবং নাম নিন।

চিত্তবাবু বসে করজোড়ে নাম প্রার্থনা করলেন।ঠাকুরমহাশয়ের সঙ্গে তাঁর দেওয়া নাম অনেকবার উচ্চারণ করলেন।পরে ঠাকুরমহাশয় তাকে নাম করার পদ্ধতিও অনেকক্ষন ধরে দেখিয়ে দিলেন এবং শোনালেন নামের মাহাত্ম্য যদিও তার দাদা পৌণ-পুণিক বলে দিয়েছিলেন যে বিধিনিয়ম ঠাকুরমহাশয়কে যেন না জিজ্ঞাসা করেন।কিন্তু চিত্তবাবু সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত হলেন।ঠাকুরমহাশয়কে তিনি জিজ্ঞাসা করে বসলেন,কী নিয়মে কতবার তিনি দিনে রাতে ঐ নাম করবেন। "নিয়ম মানে শৃঙখলা--শৃঙখলা মানে শৃঙখল! শৃঙখল মানে বন্ধন।আপনে ক্যান বন্ধনের মধ্যে যাইবেন?যখন পারেন যতবার পারেন,নাম করবেন।এর কোনও বিধি নিষেধ নাই।এই নাম করতে করতেই আপনে নিত্যধামে চইলা যাইবেন"--ঠাকুরমহাশয় বললেন।সহসা খড়মের শব্দ শোনা গেল উঠানে,উপস্থিত হলেন প্রমথবাবু।একটু বিরক্ত কন্ঠে তিনি বললেন, " তুমি কে হে ছোকরা? অসুস্থ ঠাকুরকে বিরক্ত করছ?" অপরাধীর মত আনত শিরে নিরুত্তর হয়ে চিত্তবাবু রইলেন।উত্তর দিলেন ঠাকুরমহাশয়, "ওনারে আমি আসতে বলছি।সকাল থিকা ইনি কিছু খান নাই,মায়েরে গিয়া কন এনারে কিছু খাইতে দিতে!"

প্রমথবাবু বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন।কিছুক্ষিণ পরে তার সহধর্মিণী খাবার ও এক গ্লাস জল এনে রাখলেন চিত্তবাবুর সামনে।চিত্তবাবু লজ্জিত বোধ করছিলেন এই ভেবে,নাম নিলেন কিছু প্রণামী না দিয়েই।আবার এখানে বসেই সকালের জলখাবার।ঠাকুরমহাশয় তাকে দু'তিনবার খেতে বললেন।এবার চিত্তবাবু জলখাবার খেয়ে নিলেন।নিকটবর্তী কোনও পুকুরে গ্লাস-বাটি ধুয়ে বাড়ির ভিতর দিয়ে এলেন।

ফিরে এসে দেখেন কয়েকজন নর-নারী ঠাকুরমহাশয়ের সামনে বসে।কেউ নাম ভিক্ষা করছেন,কেউ বা সংসারের সুখ-দুঃখের কথা জানাচ্ছেন।চিত্তবাবু ঘরের এককোণে দাঁড়িয়েছিলেন--শুনছিলেন তাদের কথাবার্ত্তা এবং ঠাকুরমহাশয়ের উত্তর।

চিত্তবাবুর দিকে ঠাকুরমহাশয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,যে তিনি কি বাড়ির ভিতর থেকে কিছু খাবার ওদের এনে দিতে পারবেন? লাফ দিয়ে চিত্তবাবু উঠানে নামলেন,মিনিট পনের বাদে ফিরে এলেন একখানা থালা হাতে নিয়ে এবং পরিবেশন করলেন সকলকে ঠাকুরের প্রসাদ।বেলা অনেক হয়েছিল--একে একে আগন্তুক নর-নারীরা ঠাকুরমহাশয়কে প্রণাম করে প্রস্থান করলেন।

একান্তে ঠাকুরমহাশয়কে পেয়ে চিত্তবাবু বিকেলে ঠাকুরমহাশয়ের কাছে আসতে পারেন কিনা জানতে চাইলেন।সহাস্যে ঠাকুরমহাশয় বললেন, "যখন ইচ্ছা আসবেন।" চিত্তবাবু ঠাকুরমহাশয়কে প্রণাম করে উঠে দাঁড়ালেন।তখন ঠাকুরমহাশয় বললেন, "আমি তো কারও কোন উপকারে লাগি না--আপনেরা সব কত কষ্ট কইর‍্যাই আসেন,আর আপনেগো কষ্টই সার হয়।" কান পেতে শুনছিলেন চিত্তবাবু।ঠাকুরমহাশয় বলে উঠলেন, "আপনে একটা কাজ করতে পারবেন? সাগ্রহে চিত্তবাবু ঠাকুরমহাশয়ের সন্নিকট হয়ে বললেন, আপনি বললে আমি নিশ্চয় পারব।দরজায় লেখা নিষেধ আজ্ঞাটি ছিড়ে নিয়ে দূরে ফেলে দিতে বললেন ঠাকুরমহাশয়।যদি কেউ দেখে ফেলে,ভীত হয়ে চিত্তবাবু ঠাকুরমহাশয়কে বললেন। " না,কেউ দেখতে পারব না"--বললেন ঠাকুরমহাশয়।অভয়বাণী শুনেও চিত্তবাবু এদিক ওদিক কয়েকবার তাকিয়ে দরজায় আঁটা নিষেধ আজ্ঞাটি ছিড়ে কুটি কুটি করলেন ঐ কাগজখানি।ঠাকুরমহাশয় তাকে যে শুধু "নাম"ই দিয়েছেন তাই নয়,ঠাকুরমহাশয়ের আদেশ যে তিনি পালন করতে পেরেছেন এতেই তার বিজয় উল্লাস।বোধকরি বিজয় সিংহও সিংহল জয়ের পর এতটা উল্লসিত বোধ করেননি।

RAMTHAKUR AR KOTHA RAMTHAKUR AR KOTHA Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 18:42 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.