..............

,শ্রীশ্রী রামঠাকুর। তিনি যুগাবতার-কৈবল্যনাথ-সত্যনারায়ণ-কলিযুগের ত্রাতা।

শ্রীশ্রী রামঠাকুর। তিনি যুগাবতার-কৈবল্যনাথ-সত্যনারায়ণ-কলিযুগের ত্রাতা।


শ্রীশ্রী রামঠাকুর। তিনি যুগাবতার-কৈবল্যনাথ-সত্যনারায়ণ-কলিযুগের ত্রাতা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যিনি সবাইকে এনেছেন সত্য, শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির মিছিলে। বৈষম্যহীন ও কুসংস্কারমুক্ত সমাজ বিনির্মাণকারী। তিনি ‘আলোকবর্তিকা’। যুগ যুগ ধরে আলোকিত করেছেন লক্ষ লক্ষ মানব জীবন।
‘ডিঙ্গামানিক’- বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার অগ্রগণ্য এক ‘গ্রাম’।
এই গ্রামের গর্ব-রাঢ়ীয় ভরদ্বাজ গোত্রের ব্রাহ্মণ কুলীয় ‘বিদ্যালংকার’ পরিবার।
এই পরিবারের ‘আঁতুরঘর’ আলোকিত করে, ১২৬৬ বঙ্গাব্দের একুশে মাঘ, ১৮৬০ খৃষ্টাব্দের দোসরা ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মমুহুর্তে রোহিণী নক্ষত্রে শুক্লা দশমী তিথিতে - আর্বিভূত হলেন পরম দয়াল ‘শ্রীশ্রী রামঠাকুর’।
তাঁহার পিতৃদেব রাঁধামাধব চক্রবর্ত্তী ছিলেন একজন প্রকৃত সাধক ও জপতপপরায়ণ । মাতা কমলা দেবী ছিলেন অতিশয় সরল প্রকৃতির, সেবাপরায়ণা ও রন্ধনকার্য্যে অন্ত্যন্ত সুনিপুণা।

অহৈতুকী কৃপাসিন্ধু  শ্রীশ্রীঠাকুর নরদেহে  আবির্ভূত হলেন অনিত্য সংসারের ভ্রান্ত আসক্তি থেকে সবাইকে মুক্ত করতে। লোকালয়ে প্রকট হলেন মানব সম্প্রদায়কে কালের পাকচক্র থেকে উদ্ধারের জন্য।
বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তারই নিদর্শন প্রকাশিত হতে থাকে। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর এই আদি বসত ভিটার দোতলায় উত্তরের ঘরটিতে রামঠাকুর যোগসাধনায় রত থেকে, লাভ করেছিলেন ‘সিদ্ধমন্ত্র’।
ঘরে, বাইরে, বিদ্যাপীঠে-‘বালক’ রাম সর্বত্রই একটু অনন্যসাধারণ, অচঞ্চল, স্থিরচিত্ত, গম্ভীর, সরল, কষ্টসহিষ্ণু, পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী, একাগ্রচিত্ত। গুরুজনদের তিনি একান্ত অনুগত, কনিষ্ঠদের প্রতি স্নেহপরায়ণ, কাজকর্মে নিরলস। তিনি নাম মাত্র আহার করিতেন। নিতান্ত পীড়াপীড়ি না করিলে সহজে কিছুই খাইতে চাহিতেন না। তাঁহার মাতৃভক্তি ছিল অপরিসীম।
পিতৃদেব শ্রী রাঁধামাধব বিদ্যালংকার এবং এক বছর পর তাঁর গুরুদেব মৃত্যুঞ্জয় ন্যায়-পঞ্চাননের অনন্তধামযাত্রার পর রাম গৃহত্যাগ করেন ১০/১২ বছর বয়সে, পদব্রজে শ্বাপদসংকুল বন ও গিরিসঙ্কট পাড়ি দিয়ে-অক্ষয় তৃতীয়ায় উপস্থিত হন দূর আসামের ‘কামাখ্যা মন্দিরে’। স্বপ্নলব্ধ মন্ত্র জপের সময়দেখা পান ‘গুরুদেব’ স্বামী অনঙ্গদেবের। গুরুদেবের সাথে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করে রামঠাকুর উপস্থিত হন পরম পবিত্র তীর্থস্থান ‘হিমালয়ে’। সঙ্গলাভ করেন যোগী-ঋষীদের । গুরুদেবের নির্দেশে সমাধিমগ্ন হয়ে দীর্ঘকাল করেন কঠোর তপশ্চর্য্যা ।
লোকালয়ের সর্বসাধারণকে ‘সেবা’ , ‘সত্য ও শান্তির পথনির্দেশনা’ প্রদানের জন্য-গুরুদেবের নির্দেশে, রামঠাকুর গৃহে ফিরে আসেন প্রায় ৪৬/৪৭ বছর বয়সে । এ সময়েই কিছুদিন তিনি ফেনী ও নোয়াখালীতে অবস্থান করেন। শুরু করেন গুরু-নির্দেশিত সর্বজীবের ‘সেবা’ এবং পাশাপাশি চলে কঠোর ‘যোগাভ্যাস’ । এখন জীবহিতৈষণা। কিসে জীবজগতের মঙ্গল হবে, কি উপায়ে অসত্যের বন্ধন উন্মোচন করে শুদ্ধ সত্যকে লাভ করে জীবগণ পরম পুরুষার্থ বা পরিত্রাণ লাভ করবে-তাই এখন ভাবনার বিষয়।তিনি বলেন- মিথ্যার আবরণে  শুদ্ধ সত্য অবগুন্ঠিত রয়েছে ।   মায়ার  ইন্দ্রজাল ছিন্ন করে শুদ্ধ সত্যকে উদ্ধার করাই পরম ধর্ম্ম।  জীব আপনার স্বরূপ ও স্বভাব ভুলে দুঃখপঙ্কে নিমগ্ন হয়েছে। এ মহাসত্য প্রচার করার জন্যই তিনি কাঙ্গালের বেশে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

বছর কয়েক রামঠাকুরের কর্মস্পর্শে ধন্য হয় ‘ফেনী’র লোকালয়। এখানেই তাঁর সংস্পর্শে আসেন মহুকুমা হাকিম কবিবর নবীনচন্দ্র সেন। তাঁর ‘আত্মকাহিনী’তে আছে ঠাকুর-বন্দনা :
“... রামঠাকুর দেখিতে ক্ষীণাঙ্গ, সুন্দর, শান্তমূর্তি। ... বয়স ২৬/২৭ মাত্র। ... নিজে কিছুই আহার করেন না। কদাচিৎ দুগ্ধ বা ফল আহার করেন। অথচ তাঁহার সুস্থ এবং সবল শরীর। পরসেবায় তাঁহার পরমানন্দ। ... তাঁহার ৮ হইতে ১২ বৎসর পর্যন্ত সামান্য বাঙ্গালা শিক্ষা মাত্র হইয়াছিল। কিন্তু ধর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব, এমনকি প্রণবের অর্থ পর্যন্ত সে জলের মতো বুঝাইয়া দিত। আমি তাঁহাকে বড় শ্রদ্ধা করিতাম। ... মুগ্ধ চিত্তে তাঁহার অদ্ভুত ব্যাখ্যা সকল শুনিতাম। বলা বাহুল্য, সে পেশাদারী হিন্দু প্রচারকের ব্যাখ্যা নহে।” (উৎস গ্রন্থ : আমার জীবন, চতুর্থ ভাগ, কবি নবীন চন্দ্র সেন)
কালজয়ী সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপলব্ধি-“ঠাকুর দুর্জ্ঞেয় কিন্তু আকর্ষণ তাঁর দুর্বার। ... তাঁর কাছে যখনই থেকেছি মনে হয়েছে সব পেয়েছির দেশে বাস করছি।” (ডাক্তার যতীন্দ্রমোহন দাশগুপ্তের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের কথোপকথন; উৎস : শ্রীকেশবলাল ঘোষ রচিত শ্রীশ্রীরামঠাকুর লীলা প্রসঙ্গ)
রামঠাকুরের পরম ভক্ত ডাক্তার যতীন্দ্রমোহন দাশগুপ্তের সাথে কথোপকথনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুগ্ধচিত্তে বলেছেন-“যতীন, লোকে বলে সমুদ্রের পারাপার নেই। আমি বলি সমুদ্রেরও একটা পার বা শেষ আছে। কিন্তু তোমার ঠাকুরের কোনও পারাপার নেই।” (বিবরণের উৎস : শ্রীকেশবলাল ঘোষ রচিত শ্রীশ্রীরামঠাকুর লীলা প্রসঙ্গ)
“ঠাকুর ছিলেন আড়ম্বরহীন সাধারণ মানুষের মত। বাহ্যিক আবরণের কোন বালাই ছিল না। ... তিনি সর্ব্বশাস্ত্রবিশারদ ছিলেন। মহান আত্মার ভাবাবেশে তিনি কথা বলিতেন। তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইলে সকলেরই মস্তক আপনিই অবনত হইত। মহান সঙ্গীতের ন্যায় তাঁহার কন্ঠস্বর। ... পাপী, অজ্ঞ, মুর্খ, সমাজের পরিত্যক্ত যত আবর্জনা সবাইকে তিনি কোলে টানিয়া লইতেন। যাহা তিনি স্পর্শ করিয়াছেন, তাহাই পবিত্র হইয়াছে। ... আপন-পর তাঁহার নিকট অবিদিত ছিল। সবাই তাঁহার নিকট সমান!” (উৎস : ‘তাঁহার কথাঃ শ্রীশ্রীরামঠাকুর আবির্ভাব শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ’, অধ্যাপক ডঃ প্রভাতচন্দ্র চক্রবর্তী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব আশুতোষ অধ্যাপক)
রামঠাকুর বরাবরই প্রচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসতেন। এসময়ে তাঁর নানা প্রকার বিভূতি প্রকাশ হয়ে পড়ায়  তিনি ফেনী ত্যাগ করে আবারও অজ্ঞাতবাসে চলে যান দীর্ঘ সময়ের জন্য।
জনসমক্ষে রামঠাকুরের পুনরাবির্ভাব ঘটে ১৯০২/০৩ সালে, কোলকাতায়। কখনও কালীঘাটে, কখনও উত্তরপাড়ায়, কখনও হুগলীতে, কখনও শান্তিপুরে থেকে-রামঠাকুর ‘সেবা’ করেন সর্বজীবের, পথনির্দেশনা দেন ‘সত্য ও শান্তি’র। পদব্রজে বছরখানেকের দক্ষিণমুখী যাত্রা শেষে, রামঠাকুর গৃহে ফেরেন ১৯০৭ সালের শেষ ভাগে। ঢাকা নগরীতে তাঁর পদার্পণ ১৯০৯ কিংবা ১৯১০ সালে।
পরবর্তী চার দশকে ভারতবর্ষ দেখেছে দু’ দুটি বিশ্বযুদ্ধ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের নিপীড়ন, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের ঘটনা পরম্পরা। সকল সংকটে রামঠাকুর দাঁড়িয়েছেন আর্ত মানবতার পাশে। দ্বারে দ্বারে ঘুরে যুগিয়েছেন সাহস, আশা এবং আশির্বাদ।
অপার করুণাধারায় তিনি ঋদ্ধ করেছেন শত সহস্র মানুষের জীবন।
চৌমুহনী, নোয়াখালী। ১৩৫৬ বঙ্গাব্দের ১৮ বৈশাখ। ১৯৪৯ খৃষ্টাব্দের পয়লা মে। রবিবার। দুপুর। পুণ্য অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে অগণিত ভক্তের প্রাণের ঠাকুর নশ্বর দেহ ত্যাগ করে অপ্রকট হলেন। ৯০ বছর বয়সে মহাপ্রস্থান করলেন সকলের ‘রামভাই’ শ্রীশ্রী রামঠাকুর।


ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত। জয়রাম। 



MY AMAZON PAGE, PLS VISIT MY SITE JOYRAM


,শ্রীশ্রী রামঠাকুর। তিনি যুগাবতার-কৈবল্যনাথ-সত্যনারায়ণ-কলিযুগের ত্রাতা। ,শ্রীশ্রী রামঠাকুর। তিনি যুগাবতার-কৈবল্যনাথ-সত্যনারায়ণ-কলিযুগের ত্রাতা। Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 08:53 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.