..............

একবার ঠাকুর চলেছেন পায়ে হেঁটে বরিশালের এক পল্লী গ্রামের পথে.............................

একবার ঠাকুর চলেছেন পায়ে হেঁটে বরিশালের এক পল্লী গ্রামের পথে.......



একবার ঠাকুর চলেছেন পায়ে হেঁটে বরিশালের এক পল্লী গ্রামের পথে। সঙ্গে আছেন বহু ভক্ত যেমন সুধীর চক্রবর্তী, আছেন ধীরেনবাবু, মনমোহন বাবুরা। ঠাকুর হেঁটে চলেছেন দ্রুত চলার ছন্দে মরাল গতি। যেন রাজহংস গলা উঠিয়ে চলেছে জল ভেদ করে। মসৃন ঢেউ প্রান্তরের আগেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সুধীর চক্রবর্তীরা কুল পাচ্ছে না ঠাকুরের সাথে হেঁটে। দূর থেকে ঠাকুরকে দৃষ্টি গোচরে রাখছে। ঠিক এমনি একটি সময় গায়ের একটি কচি বধু সিক্ত নয়নে কাঁদতে কাঁদতে ঠাকুরের পাদপদ্মের কাছে এসে লুটিয়ে পড়ল। তার করুন আর্তনাদে আকাশ বাতাস যেন কেঁদে উঠল। তার আর্তিতে শুধু একটি আবেদন- ঠাকুর দয়াময় তুমি তো সবই জান। তাই তুমি যখন এসেছ, তোমার যখন দর্শন পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে তখন আমার জীবনের অমানিশা আঁধার সত্যিই কেটে যাবে। বেদনায় ভরা করুন মুখখানি আকুতি জানাল ঠাকুরকে - চল প্রানের ঠাকুর, চল মহিয়ান আমার হৃদয়ের ত্রাতা হিসাবে। এসেই যখন পরেছ, সুযোগ দাও তোমার পদধুলিতে আমার অঙ্গন পবিত্র করতে। বধুটির আবেদনে ঠাকুর তার সাথে প্রবেশ করলেন অন্দরে। ভক্তিতে সশ্রদ্ধ বধুটি করজোড়ে নিবেদন করলেন তার দুঃখের কাহিনী, তার সুরাসক্ত উচ্ছৃঙ্খল চরিত্রহীন স্বামীর কথা। দু-পাঁচ দিনেও ফেরেন না বাড়িতে। যদিও ফেরেন তাও দু-তিন ঘন্টার জন্য। আবার বেরিয়ে যান। ঠাকুর তুমি রক্ষা কর, তুমি বিশ্ব নিয়ন্তা, তুমি সবই পার। শরনাগতিকে আশ্রয় দিয়ে সুপথে চালিত করতে একমাত্র তুমিই পার। বঁধূটির আকুতিতে ঠাকুর উত্তরে বললেন - তাকে আমার কাছে নিয়া এস। সে না আইলে আমি কি করতে পারি? বঁধূটি কী করবে? স্বামী ত তার কথাই শুনেনা। ঠাকুর বঁধূ টির প্রার্থনা বুঝিয়া মঞ্জুর করলেন। ঘটে গেল এক বিরল অঘটন। বঁধূটিকে সান্ত্বনা আর আশীর্ব্বাদ দিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করলেন। কিছু দূর যেতেই দেখতে পেলেন মাতাল জমিদার পুত্রটি টলতে টলতে অশ্রাব্য কথা বলে এগিয়ে আসছে। কিন্তু যতই ঠাকুরের কাছে আসছে ততই তার বাকরহিত অবস্থা। সামনে এসে লুটিয়ে পড়লেন ঠাকুরের পাদপদ্মে। একী বিস্ময়! ঠাকুরের বুড়ো আঙুলে মুখ রেখে পরম তৃপ্তিতে চুষতে লাগল। তার চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু বইতে লাগল। 
ঠাকুর বলছেন - খা আরো খা এমন মদ আর পাবি না। স্নেহ বরিসনে অমৃত ধারা ঠাকুরের প্রাণে বইতে লাগল। জমিদার পুত্র ধৈন্য হল। তখনও মাতাল ঠাকুরের পায়ের আঙুল চুষে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ঠাকুর তাকে নিজ হাতে তুলে ধরেছেন। ততক্ষণে তার নেশা কেটে গেছে। অবাক বিস্ময়ে ঠাকুরের পায়ের দিকে চেয়ে জমিদার পুত্র বিমোহিত। তার চোখ বেয়ে জল পড়ছে।
ঠাকুর বললেন - বাড়ি ফিরা যান। স্ত্রীরে সম্মান করবেন। ভালোভাবে চলবেন।
মাতাল জমিদার ফিরে এল ঘরে। বিস্ময় ঘোরে সে তখনো আবিষ্ঠ। স্ত্রীর কাছে ঠাকুরের কথা শুনে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে ভক্তির ভাবে আপ্লুত হয়ে গেল তার মন। তার চোখে শুধু ঠাকুরের পাদপদ্ম। তার স্মৃতিতে শুধু ঠাকুরের পায়ের আঙুল চুষা। সেই তার চরম নেশা। ঠাকুরের অশেষ কৃপা না থাকলে এমন হতে পারে না। তার স্ত্রী অতি ভাগ্যবতী আর পতী পরায়না হওয়াতে স্বামীকে কুপথ বর্জনে এভাবে গুরু চরণে নিজেকে সমর্পণ করেছিল।
তাই স্বামী-স্ত্রী দু-জন মিলে আবার হাজির হল ঠাকুরের পাদপদ্মে। ঠাকুর দয়া পরবশ হয়ে দিলেন নাম। সেই নামের ধারায় নিমজ্জিত হয়ে ফিরে এলেন নতুন জীবনে। উত্তরণের পথ ধরে এগিয়ে এলেন পঙ্কিল পথ ছেড়ে নব পথে গুরু মহিমায়।



~ পরমেষ্ঠী গুরু শ্রীশ্রী রামঠাকুর
ডঃ প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য
পৃষ্ঠা: ৩৯৫
একবার ঠাকুর চলেছেন পায়ে হেঁটে বরিশালের এক পল্লী গ্রামের পথে............................. একবার ঠাকুর চলেছেন পায়ে হেঁটে বরিশালের এক পল্লী গ্রামের পথে............................. Reviewed by SRISRI RAMTHAKUR KOTHA O BANI YOUTUBE CHANNEL on 12:21 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.